সাগর, মহাসাগর। সংখ্যার বাঁধনে বাঁধা যায় না এমন অ-বলা, অবর্ণনীয় জলরাশি বুকে পিঠে ধারণ করে তাদের দিনযাপন। প্রতিটি জলকণার জীবন, মনন, প্রকৃতি, প্রত্যয়, জীবনবলয়ের অব্যয় ভিন্ন থেকে ভিন্নতর কখনো কখনো ভিন্নতম। কখনো এক জলকণাবর্গের সাথে অন্য জলকণাবর্গের প্রচণ্ড তর্জন, গর্জন, আন্দোলন হয়ে থাকে। তার ফলস্বরূপ জন্মগ্রহণ করে তৃতীয় একটা দৃশ্যমান কিছু- ফেনা- তাই কবিতা । আর কবি হলেন সেই ব্যথা, কথা, প্রথা যিনি বুঝেন কখনো কখনো বোঝান। তবে কবি কখনো গৃহ শিক্ষকের মতো বোঝানোর উদ্দেশ্য কলম ধরেন না। তাঁর কলম কথা বলতে আরম্ভ করে যখন চিন্তার গোলায় আগুন লাগে। আগুনের দুটি রূপ— আলো, তাপ। কখনো তাপের তাড়নায় কবি লেখেন আবার কখনো আলোর ঘ্রাণে লেখেন। কবির লেখা মূলত অন্তরে চাষকৃত সম্প্রসারিত আগুনের অনুপ্রকাশ। আবুল হাসানের কবিতায় যখন পায়চারি করি তখন মন বলে
মত দ্বিমত
যেখানে কেবল দেয়াল গড়ে উঠে
বাংলাদেশের প্রধান প্রধান সড়কে ভ্যান চলে, বাস চলে, রিক্সা চলে, মোটর বাইক চলে, চলে আরো বিলাসবহুল গাড়ি। জগাখিচুড়ি রাস্তা। রাস্তা দেখেই বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতা অনুধাবন করা যায়। জগাখিচুড়ি মানসিকতা। অর্থাৎ এখানে আদর্শের কোনো ঐক্য নেই। এখানকার মেয়েরা বোরখাও পড়তে চায়, আবার পার্কের অন্ধকারাচ্ছন্ন গাছের নিচেও বসতে চায়। আর ছেলেরা টুপি পড়বে, সারারাত ধর্মের কাহিনি শুনবে কিন্তু সকালে সালাত কায়েম করবে না। জনাব পীর সাহেব মোনাজাত ধরেন মানুষের মুক্তির জন্য যতটুকু তার চেয়ে বেশি নিজস্ব দল ভারী করার জন্য। পীর সাহেবদের মধ্যে শত শত গ্রুপ। হযরত মাওলাদের মধ্যেও শত শত গ্রুপ। এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে ফতোয়ার উপর ফতোয়াবর্ষণ করতে থাকে, কাফের ফতুয়া। এখানে আছে সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা। ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক ভাগে বিভক্ত। সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থা অনেক ভাগে বিভক্ত। এখানে
মহাকালের পথে অনন্ত সাধনা
একটা শব্দ আমরা যখন শুনি, আমাদের অনেকেরই ধারনা শব্দটা বাইরে হচ্ছে। বাইরে হয়তবা শব্দটা হয়। কিন্তু শব্দটা আসলে ভেতরে হয়। আমরা শব্দটা শুনি আমাদের ভেতরে। প্রশ্ন আসতে পারে, শব্দ যদি বাইরে না হয় আমরা ভেতরে শুনি কীভাবে? অনেক শব্দ বাইরে হয় আমরা ভেতরে শুনি না। কারন যে শব্দকম্পনগুলোর সাথে আমাদের অভ্যাস হয়েছে, বায়োলজিক্যাল রিদম সম্পূর্ন হয়েছে, ঐ শব্দগুলো আমরা শুনি। কারন কুকুর যে শব্দগুলো শুনে আমরা সেই শব্দগুলো শুনি না। কিন্তু বাইরে তো কুকুরের শোনা শব্দটা ঠিকই রয়েছে। আমি একটা খাবার খেয়ে খুব স্বাদ পেলাম। কিন্তু এই আমিই যখন অসুস্থ হয়ে যাই তখন কিন্তু এ খাবারের স্বাদটা আর পাই না। এর মানে কি? খাবারের মধ্যে স্বাদ নাই? অবশ্যই খাবারের মধ্যে স্বাদ আছে। আমার মধ্যে নাই। আমার মধ্যে নাই বিধায় আমি ঐ স্বাদ পাচ্ছি না।
চাকরি করার কোনো বয়স থাকতে পারে না
চাকরি মানে খেলার মাঠ নয় যে খেলতে নামলেন আর সময়ের দিকে তাকাতে থাকবেন। চাকরি মানে সেবা। সেবা করার কোনো বয়স থাকতে পারে না। কারো মনে হলো চল্লিশ বছর বয়সে চাকরি করবে মানে সেবা করবে, একটি কল্যানমূলক রাষ্ট্রে সেই ব্যবস্থাও থাকা আবশ্যক। পৃথিবীর কোথাও কী আছে এটা দেখা খুব জরুরী নয়, পৃথিবীর কোথাও কী আমরা রপ্তানি করবো এটা দেখার বিষয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই, এই বাংলায় আছে, আমরা তাঁর আদর্শ পৃথিবীর অন্য দেশে রপ্তানি করতে পারি এবং করেছি। এই লেংদেয়া বয়সীনীতি জাতিকে মানসিকভাবে দুর্বল করে তুলে, মানসিকভাবে দুর্বল জাতি উন্নত রাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারে না। সাহসিক মানসিকতাও একটি জাতির বিশাল সম্পদ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সাহসের চিহ্নসূচক। একটি কথা প্রচলিত আছে। আর তাহলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া মেধার দিক
বৈষম্যের স্রোতে সমতার স্লোগান
বস্তু মাত্রই অসংখ্য অণু বা কণার সমষ্টি। প্রতিটি কণা স্বতন্ত্র ওজন নিয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকর্ষিত হচ্ছে। ভূ-কেন্দ্র হতে প্রত্যেক কণার দূরত্ব অধিক হলে পাশাপাশি অবস্থিত কণাগুলোর ওপর পৃথিবীর আকর্ষণ বল পরস্পর সমান্তরাল ও সমমুখী। বস্তুটিকে যেভাবেই রাখা হোকনা কেন এ সমস্ত সমান্তরাল বলগুলোর লদ্ধিবল একটি বিন্দুতে ক্রিয়াশীল থাকে। এই বিন্দুই হলো বস্তুর অভিকর্ষ কেন্দ্র বা ভার কেন্দ্র। ভার কেন্দ্রের আচরণ, গতিবিধি বস্তুর অন্য কেন্দ্র থেকে আলাদা। সেন্ট্রাল অব গ্রেভেটির কারনে বস্তুর মধ্য থেকে কিছু অংশ আলাদা হয়ে যায়। সুতরাং ল অব নেচারের কারনে বৃহত্তর পরিসীমায় বৈষম্যে থাকবে তাইতো স্বাভাবিক। শীতকালে সূর্য পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে যায়। সূর্যের অবস্থানের কারনে পৃথিবীর কোথাও তাপমাত্রা হিমাংকের নিচে নেমে আসে। অল্প তাপমাত্রায় আর অধিক তাপমাত্রায় উৎপাদিত ফসল কখনো এক নয়।
পুরুষের ছায়ায় নারীর কায়া
আমাদের সমাজ বোনকে বোঝা মনে করে। কোনো বোন যখন পৃথিবীতে আসে তখন আযান দেয়ার রীতি নেই। অথচ ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী কোনো মানুষ জন্মগ্রহন করলে তাকে নতুন পৃথিবীতে স্বাগতম বার্তা হিসাবে আযান দেয়ার রীতি ধর্মবৈধতা লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের সমাজে কেবল বেটাছেলে পৃথিবীতে এসেই স্বাগতম বার্তা লাভ করে। স্বাগতম বার্তার মধ্য দিয়ে শুরু হয় বিষম বাহুর হিসাব নিকাশ যেখানে তিন বাহু কখনো এক হয় না। দেখা যায় সমদ্বিবাহুর বিপরীত কোনের মানে অবস্থান করে নারী আর বেটাছেলে একেবারে নব্বই ডিগ্রি। অর্থাৎ দুজন মেয়ে সমান একজন ছেলে। আদিমকালে প্রত্যেক সম্প্রদায় প্রার্থনা করতো মাটিতে অধিক ফসলের, গাভীর অধিক বেটিসন্তান আর অধিক উর্বর নারীর। আদিম ধারনার পরিবর্তন কিছুটা হয়েছে। এখন সমাজ অধিক সন্তান কামনা করে না। গ্রামে দেখতাম গাভী যখনই বেটাসন্তান প্রসব করতো তখন বুরুব্বির মুখ ম্লান হয়ে
অভ্যাস জন্মগত নয়, জন্মমাত্র মানুষের অভ্যাস থাকে
ইলেকট্রন। প্রোটন। নিউটন। কোয়ার্ক। একসময় সময়ের চরে ভেসে উঠে প্রাণী। প্রাণী থেকে বিস্তৃর্ণ প্রাণিমাঠ। প্রাণিমাঠ থেকে মানুষের ইতিহাস। জন্ম থেকে প্রাণীকে প্রকৃতির সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। মানুষকেও যুদ্ধবিদ্যা আয়ত্ত করতে হয়েছে। মানুষ যুদ্ধে সমকালীন পারদর্শী। জ্ঞানের রাজ্যে ভ্রমণ করে জানতে পারি যে মানুষই প্রকৃতিরাজ্যের নায়ক, অন্যভাবে বললে 'চালাক শোষক'। প্রকৃতির প্রত্যেকটি বিভাগে মানুষ তার প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট রয়েছে, সফলও হচ্ছে। মানুষের ইতিহাস তাইতো প্রভাব বিস্তারের ইতিহাস যেখানে টিকে থাকা আসল কথা, পাপ-পুণ্যের প্রশ্ন অবান্তর। মানুষ প্রথমে অভ্যাস তৈরি করে। পরে অভ্যাস মানুষকে চালিত করে। অভ্যাস সব সময় চাহিদাকে সামনে রেখে গঠিত হয় এমন নয়, চাহিদার আয়োজনকে ফাঁকি দিয়েও সে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে থাকে । অভ্যাস জন্মগত নয়, জন্মমাত্র মানুষের অভ্যাস থাকে। শব্দ উচ্চারণের অভ্যাসে ভাষার জন্ম। ভাষার জন্মের
প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আমাদের ভবিষ্যৎ
একাডেমিক শিক্ষা অনেকটা ঘরের মতো। যখন ঘর ছিল না তখনো মানুষ পৃথিবীতে ছিল। তখন আকাশটাই ছিল একমাত্র ছাদ। এখন ছাদের ভেতরেও ছাদ আছে। ঘরের প্রান খুঁটি। খুঁটিকে অনেকেই খুঁটিনাটি বিষয় বলতে পারে। কিন্তু খুঁটিনাটি বিষয়টি ঘরের জন্য মহা সত্য। দালানের জন্য যেমন ফাউন্ডেশন প্রান তেমনি ঘরের জন্য খুঁটি তেমনি একাডেমিক শিক্ষার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার একাডেমিক আঁধার প্রাথমিক বিদ্যালয়। অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয় একাডেমিক শিক্ষার ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশন দুর্বল হলে দালান যত আকাশমুখী হবে ততই বিপদজনক। বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষা তথা ফাউন্ডেশন শুধু দুর্বল নয়, খুবই দুর্বল। দুর্বলতার কারন অনেক। প্রধান কারন শিক্ষক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক যারা আছেন তাদের শিক্ষার গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন করা যায়। অধিকাংশ শিক্ষক নিজের পছন্দকে সামনে রেখে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেননি। নিজের পছন্দ মতো বিয়ে না করলে কারো দাম্পত্য
দ্যা সাউন্ড অব সাইলেন্স
`সিয়েন আনিয়োস দে সোলেদাদ' উপন্যাসের সূচনা অনেকটা কৌতূহলে , রহস্যে-- যেখানে প্রথম হোসে আর্কাদিয়ো একটি লোককে হত্যা করে আর এরপর সে প্রচণ্ড অনুশোচনায় ভোগে, ভয়ঙ্কর রকমের এক বিবেকের দংশন শেষ পর্যন্ত তাকে তার গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করে এবং গ্রাম ছেড়ে পাহাড়-পর্বত ডিঙিয়ে সে পত্তন করে পৌরাণিক মাকোন্দোর। 'সিয়েন আনিয়োস দে সোলেদাদ' উপন্যাসটির লেখক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। লাতিন আমেরিকার উপন্যাস নিয়ে বিশেষ করে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এর লেখালেখির পেছনের কাহিনি নিয়ে চমৎকার একটি কথোপকথনের [গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস এবং মারিয়ো বার্গাস ইয়োসা এর মধ্যে কথোপকথন] বই আমার হাতে আসে। গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম। ক্লাসের পেছনের বেঞ্চটি নির্বাচন করলাম যাতে আমার গিলাতে কোনো কাঁটা না লাগে। ক্লাস শেষে সোজা সেমিনার লাইব্রেরীতে চলে আসি। সেমিনার লাইব্রেরীর বইগুলো চুপচাপ, কলহীন, শান্ত; কুমারীও বলা যায়। কারণ আজ পর্যন্ত
ধর্ম
শুদ্ধতার কোনো সঠিক গন্তব্য নেই। শুদ্ধতা এক ভ্রমণের নাম। শুদ্ধতার পথে প্রত্যেক মানুষ পথিক মাত্র। শুদ্ধতার পথে প্রামাণিক কোনো স্টেশন আজো আবিষ্কৃত হয়নি। তারপরও ধর্ম শুদ্ধতার স্টেশন বা প্রতিষ্ঠান হিসাবে জনপ্রিয়। ধর্ম এবং উগ্রতা আলাদা ধারণা। ধর্ম হল একটি বিশ্বাস যা মানুষ ধারণ করে। ধার্মিক বিশ্বাস করে শান্তিময় পৃথিবীর। ধার্মিক জানে কীভাবে শান্তিতে থাকতে হয় এবং অন্যকে রাখতে হয়। উগ্রতা ব্যক্তিগত। অজ্ঞতা উগ্রতার জন্মস্থান। আবু জাহেলের নাম মূলত আবুল হেকাম। হেকাম অর্থ জ্ঞানী, প্রাজ্ঞ। আবু জাহেল যখন হযরত মোহাম্মদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারেনি তখনই তার নামের গুরুত্ব কমে যায়। আবু জাহেলের বাড়িতে আজ টয়লেট যেখানে প্রস্রাব করলে পুণ্য হয়। হযরত মোহাম্মদ আবু জাহেলের বাড়িতে প্রত্যেক দিন কয়েকবার করে যেতেন। আয়াত নাযিল হলো তার বাড়িতে গিয়ে ফায়দা নেই। কারণ আল্লাহ তার দিলে মোহর মেরে