পুটিয়া বাজার। এখানে গরু পাওয়া যায়, ঘোড়াও পাওয়া যায়। পান পাওয়া যায় আবার ধানও পাওয়া যায়। কল পাওয়া যায় আবার বলও পাওয়া যায়। পুটি মাছ থেকে পুটিয়া। শনিবার বড় হাট, বুধবার তার চেয়ে ছোট হাট বসে। বাজারের পাশ দিয়ে লেকলেকে হাড়িধোয়া নদী বয়ে চলেছে। আশেপাশের বিশ ত্রিশ গ্রামের প্রধান ভরসার জায়গা এই বাজার। গ্রামের মানুষের প্রায় সব প্রয়োজন নিয়ে বসে আছে এই বাজার। এই বাজারেই এক সময় ডাকাতি হতো। জয়নাল ডাকাতের নাম এখনো মুরুব্বিদের মুখে শুনতে পাওয়া যায়। এখন আর এখানে ডাকাত আসে না। তবে কয়েকটি ব্যাংক বাজারের আশেপাশে খুব শক্তিশালী উপায়ে অবস্থান নিয়েছে। পুটিয়া বাজারকে কুফি বাজারও বলা হয়। কারন আছে। মাগরিবের পর প্রায় সব দোকানে মোটা সলতের কুফি জ্বলে ওঠতো। এখনো জ্বলে ওঠে। তবে আগের তুলনায় খুবই কম। আধুনিক বাল্ব এসে কুফিকে
ভ্রমণ
মানুষের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার মানুষ
মানুষের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার মানুষ। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য প্রায় এক। কিন্তু মানুষের সৌন্দর্য বৈচিত্র্যমিত্র। মানুষের হিংসা ভালো লাগে, মানুষের রাগ ভালো লাগে, মানুষের অভিমান ভালো লাগে, মানুষের নির্লিপ্ততা ভালো লাগে। আকাশ যেকারনে আকাশ সেই কারনে আকাশকে ভালো লাগে। মানুষ যে কারনে মানুষ সেই কারন ছাড়াও মানুষকে ভালো লাগে। সৌরজগৎ কসমিক সময়ের কাছে একটি বালির চেয়েও ছোট। আর পৃথিবীর জায়গা তো সেখানে নেই বললেই চলে। মানুষ ত আরও নেই। তবুও মানুষ একটা পারমানবিক বোমার নাম, মানুষ একটা ঐতিহাসিক প্রেমের নাম। কোপাই নদীর সাথে কুমিল্লার গোমতী নদীর বেশ মিল। গোমতী নদী কিন্তু আমাদের ছোট নদী না যে বাঁকে বাঁকে চলে। সন্ধ্যা মাঝি সাঁওতাল বালিকা। দশম শ্রেনির ছাত্রী। তাকে দেখে আমার মাথিনের কথা মনে পড়ে। ধীরাজ বেটা কৃষ্ণের যোগ্য বংশধর হয়তো। এখানে মাথিনকূপ নেই, আছে কংকালীতলা। সন্ধ্যা
গ্রামীন হৃদয়ের আকাশ বাতাস
নাগরিক মানুষ প্রতি রাতে হয়তো মিউজিক প্লেয়ার চালু করে ঘুমিয়ে যাওয়ার অভিনয় করে কিন্তু চোখে ঘুম আসে না, তারপর কেমিক্যাল কেয়ারে চোখের পাতা বন্ধ করে এবং নিজেকে হাজার রকমের অটোসাজেশন দিতে দিতে স্বপ্নের দেশে যাওয়ার মিশন চালায়। কিন্তু এখানে ব্যাঙ কাহারবা তালে মিউজিক প্লেয়ার অন করে। প্রাকৃতিক মিউজিক প্লেয়ার। এখানে বিছানায় গতর রাখা মানে চোখে চমৎকার ঘুম নেমে আসা, মনে নেমে আসে সুমনা স্বপ্ন। ঘুম থেকে জেগে ওঠলেই অনুধাবন করা যায় ঘুমিয়ে ছিলাম। হলুদ আলো চোখে এসে নাচতে শুরু করে, হাঁসের চুই চুই ডাক কানে এসে তারাময় সঙ্গীত রচনা করে। হাঁসের ডাক শেষ না হতেই লাতার কামুক ডাকক্রিয়া মনে জানান দেয় প্রকৃতির অমিয়ভূষন নিয়তির কথা। লাতার ডাকের সাথে হামিং করে ছাগলের বাআ বাআ ধ্বনি হৃদয়ে নিয়ে আসবে চরসাটুরিয়া আবেদন। গ্রামের প্রাকৃতিক
বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের স্মৃতি
কাসেম ভাই। পারভেজ মুন্না নামে নিজের পরিচয় দিতে ব্যাপক স্বাচ্ছন্দবোধ করেন তিনি। কাজ করেছেন ১৮ বছর বাংলাদেশ নৌবাহিনিতে। কবিতাবাহিনিতে ইদানিং ব্যাপক তোড়জোড়রে নিজেকে যুক্ত করেছেন। ভালোবাসেন কবিতা ও বই পড়তে। ইদানিং তেমন বই পড়ছেন না, ইদানিং কবিতাঘোর তাকে আক্রান্ত করেছে। একদিন রাতে তার মাথায় কবিতা নাযিল হচ্ছে, এমন সময় তার প্রস্রাব পায়। কবিতাঘোর চলে যাবে, তাই লুঙ্গি না পরেই টয়লেটে যাত্রা করেন তিনি। তার কাছ থেকে জানতে পারি— হয় তিনি একটা কবিতা জীবনে লেখবেন নতুবা পাগল হয়ে যাবেন। কমান্ডো প্রশিক্ষন তিনি নিয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনি থেকে। এই প্রথম কোনো সামরিক বাহিনির লোকের সাথে আমার সাক্ষাৎ ঘটে যিনি কবিতা লেখার জন্যে জীবনের দীর্ঘ সমুদ্র সফেন অতিক্রম করার প্রয়াস করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হেমন্তী গল্প পড়ে সাহিত্যের প্রতি তার অনুরাগ জন্মে ১৯৯৮ সালে। তারপর থেকে জ্ঞানতৃষ্ণা কাতর
আতকা পর্যটক
ক হঠাৎকে আমাদের এলাকায় বলে আতকা। আতকা ফকির আমাদের এলাকায় প্রচুর রয়েছে। আমরা আতকা ফকির না— আতকা পর্যটক। আতকা ঘর থেকে বের হয়ে যাই চোখকে পাঞ্জেরি মেনে। মান্যবর চোখ আমাদের নিয়ে যেতে থাকে গ্রাম থেকে গ্রামে শহর থেকে শহরে। জলসাতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সাইদুর আঙ্কেল, আমিনুল ইসলাম ভাই, নবী হোসেন ভাই, সৈকত আর আমি। আতকা পর্যটক হয়ে উঠার ইচ্ছা জাগে। ড্রাইভার বাবুকে পেয়ে গেলাম। চলো নাছিরনগর থেকে ঘুরে আসি। বাবু নিমিষেই রাজি। আমার জানামতে আড়াইসিধা থেকে নাছিরনগর রিক্সাভ্রমন কেউ করে নাই।আমরা প্রথম ইতিহাস নির্মান করলাম। ভবিষ্যতে আরও কেউ করতে পারে। সরাইল কুট্টাপাড়ার মোড় থেকে নাছিরনগর আসাযাওয়ার রাস্তাটি অসাধারণ। আমাদের এলাকার মানুষ এই রাস্তাটিকে মিনি কক্সবাজার বলে। দুইপাশে জলের সারি। মাঝখানে রাস্তাটি। এই রাস্তাটি দেখার জন্যে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে এই বর্ষাকালে। এই
হাওড় নয়, হাওড়ের মতো
নবীনগর উপজেলার পূর্বাংশে নাটঘর ইউনিয়নের অবস্থান। নাটঘর ইউনিয়নের আয়তন ৬,৪৭৬ একর (২৬.২১ বর্গ কিলোমিটার)। জনসংখ্যা প্রায় তিরিশ হাজারের মতো। এই নাটঘর ইউনিয়নের একটি গ্রাম রসুলপুর। মাত্র একটি ব্রিজকে কেন্দ্র করে এটি ইদানিং হয়ে উঠেছে মানুষের বিনোদন কেন্দ্র। বর্ষাকালে প্রচুর মানুষ একটু শ্বাস ফেলার ইচ্ছায় চলে আসে এই রসুলপুর গ্রামে। এই গ্রামের এক পাশে তিতাস নদী। বর্ষার জলে তিতাস নদী যখন টইটুম্বুর হয়ে ওঠে তখন চাষের জমি হয়ে ওঠে তরতাজা জলল প্রাণ। বাংলাদেশের মানুষ জল পছন্দ করে পছন্দ করে জলগোষ্ঠী জলের স্বাভাবিক ধারা-উপধারা প্রবাহ। রসুলপুর ব্রিজ থেকে একটি রাস্তা সোজা চলে গেছে বিদ্যাকুটের দিকে। বর্ষাকালে এই রাস্তার দুই ধারের ধানি জমিতে কেবল জল আর জল। হাওড় নয় তবে হাওড়ের মতো (গ্রীষ্মকালে হাওরকে সাধারণত বিশাল মাঠের মতো মনে হয়, তবে মাঝে মাঝে বিলে পানি
ঝড়কন্যা মাইশা
মাইশা। ওর নাম মাইশা। বাবা পুলিশ। মা গৃহিনী। মাইশার সাথে আমার দেখা ট্রেনে। আমাদের পেছনের সিটে তাদের সিট। আমরা একটি ঝড়কে ধরবো বলে চিটাগাং যাচ্ছিলাম। কিন্তু ঝড়কে ধরতে পারিনি, পেরেছি এই ঝড়কন্যাকে হালকা উপলব্ধি করতে। এই ঝড়কন্যা ক্লাস টুতে পড়ে। প্রথম দেখাতে মনে হয়েছিল মাইশা জমানো চুপচাপ এক বরফের নাম। ক্লাস টুতে তার রোলনং দুই। সে চায় ক্লাস থ্রিতে তার রোলনং হোক তিন। ক্লাস ওয়ানে তার রোলনং ছিল এক। যখন তার বরফ গলে গেলো তখন সে নদী হতে পারতো, হয়েছে সাগর, তাও আবার আটলান্টিক মহাসাগরের উত্তাল ঝড়। এই ঝড়কন্যা আমাকে সিটে বসে থাকতে দেয়নি। তার মতে আমি আল্লার চেয়েও কালা। আমি বললাম, ‘আল্লা কালা এই কথা তোমাকে কে বলছে?’ সে বলে, সে নাকি প্রতি রাতে আল্লাকে দেখে। আমি বললাম আমি যেহেতু কালা সেহেতু আমার
মল্লিকপুর
আজকে শুক্রবার। ছোটকালে মনে করতাম পৃথিবীর সব কিছু বন্ধ থাকে শুক্রবারে। এখন জানি কোনো বারেই কোনো কিছু বন্ধ থাকে না। ‘বিরতি, বন্ধ’ মানুষের বানানো শব্দ। মানুষের বানানো শব্দ থেকে দূরে থাকতে পারলে পৃথিবীর কাছাকাছি থাকা যায়। পৃথিবীর কাছে থাকা মানে কসমিক সিস্টেমের খুব কাছে যাওয়া। অনেক শব্দের ভেতর দিয়ে আমরা নিজের অবস্থান জানতে চেষ্টা করি বলেই আমাদের কাছে আমরা আগন্তুক। আগন্তুক রেজা আজকে যায় নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার হাঁটুভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের নিকটবর্তী গ্রাম মল্লিকপুরে। শুধু রেজা যায়নি, রেজাসহ দশজনের একটি টিম আজকে গিয়েছে মল্লিকপুর গ্রামে। এমরানুর রেজার কাছ থেকে জানতে পারি গ্রামটি মনের মতো মনোরম। গ্রামের চেয়ে গ্রামের মানুষের আচরন আরও বেশি অমায়িক সুন্দর। গ্রামের ঠিক উঠোনে মেঘনা নদী। মূল মেঘনা নয়, মেঘনার শাখা। বাউলদের জীবন এখানে মেঘনার মতোই সতত প্রবাহমান। মেঘনা আর
প্রত্যেককে বাড়ি যেতে হয়
সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা প্রকৃতির অপার মহিমায় লালিত নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার প্রায় ত্রিশ হাজার লোকের আবাস ভূমি সল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ। পরিবার সংখ্যা ৫ হাজার ১৭০ টি। গ্রামের সংখ্যা ৩টি। মৌজার সংখ্যা ৪টি। হাট-বাজার সংখ্যা ৪টি। ইব্রাহিমপুর মুক্তিযোদ্ধের বধ্যভূমি, ইব্রাহিমপুর সৈয়দ মো. আ. খালেক শাহ (রা.) এর মাজার শরীফ এই ইউনিয়ন পরিষদের যেনো মোমবাতি রেখা। আমরা সল্লাবাদ গিয়েছি। উদ্দেশ্য সামাদ শা’র মাজার পরিদর্শন। নেংটার মাজার হিসাবেও সল্লাবাদের এই মাজারটি পরিচিতি লাভ করেছে। আভিধানিকভাবে এটি সররাবাদ দক্ষীণ পাড়া আ. ছমেদ লেংটার মাজার শরিফ নামে বেশ জনপ্রিয়। নেংটা মানে উলঙ্গ। অর্থাৎ ছামাদ সাহেব কাপড় পরিধান করতেন না। তার পীর জলিল শাহ। জলিল শা’র বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালিগুচ্ছ। নেংটা কাউকে মুরিদ করতেন না। যারা তার কাছে আসতেন সবাই তার ভক্ত। নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, সিলেটসহ বাংলাদেশের
নরসুন্দার স্মৃতি
নরসুন্দা। নদীর নাম। জন্মস্থান হুসেন পুরের পুরাতন ব্রক্ষপুত্র। নদীটির শরীর ক্যাটরিনা কাইফ টাইপের। কিশোরগঞ্জ গ্রাম্য শহরের একমাত্র নদীপ্রাণ হলেন তিনি। করিমগঞ্জের ধনু নদীর সাথে তাঁর রক্তের সম্পর্ক। কিন্তু কবেকার সুদর্শনার মতো তিনি আজ মৃত। স্থানীয় ভাষায় মরা নদী। এখনো মানুষদের মধ্যে সচেতন গোষ্ঠী লেখক, মরার নদীর বেদনায় মর্মাহত। তাইতো চুপিচুপি গোপন অভিযান চলে। নরসুন্দার যৌবন ফিরিয়ে আনার অভিযান। আশার কথা নরসুন্দার খনন কার্য শুরু হয়ে গেছে। আবারও নরসুন্দার পূর্ণলাবণ্যের ছল ছড়াবে সৌন্দর্যের অন্তর আত্মায়। কবি মেরাজ রাহীম তিনার নিত্যচলনে মুগ্ধ হয়ে প্রেম নিবেদন করবেন, শোনাবেন প্রেমের উৎসর্গে ভাষাবাণী, ‘তোমার বাড়িতে মালতি ফুটেছে আমার বাড়িতে ঘ্রাণ আমার বাড়িতে এ মরণদেহ তোমার বাড়িতে প্রাণ’ মেরাজ রাহীমের সাথে আট বছরের পরিচয়। ইথারীয় পরিচয়। তাঁর হাসিটা জন্মমাত্র শিশুর মতো তুলতুলে। মানুষটার প্রতিটি আবেদন সারল্যের জোয়ারে টুইটুই। সরলপ্লাবনে আবেদন করলেন যেন ছড়া