এন্ড্রয়েড। আমার প্রথম এন্ড্রয়েড মোবাইলটির নাম ওয়াল্টন। কিনেছিলাম দুই হাজার চৌদ্দ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। দুই হাজার সতেরো সাল পর্যন্ত তার সাথে আমার সংসার। সংসার আমাদের ভালোই ছিল। অল্প সময়ের জন্যও সে আমাকে কোন কষ্ট দেয়নি। আমি? সে হয়তো আমাকে সুখ দিয়েছে আমি তাকে দিয়েছি প্রশান্তি। আমি তার মর্যাদা ও সম্মানে কোনো প্রকার আঘাত করিনি। তাকে তার মতো থাকতে দিয়েছি। তার স্বাতন্ত্র্যবোধে ব্যক্তিজিজ্ঞাসা চাপানোর মতো অপদার্থ ব্যক্তিত্ব ধারণ করার মতো পারিবারিক শিক্ষা আমার নেই। তাকে দিয়েছি শতভাগ নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা। তারপরও আমাদের সংসার তিন বছর টিকেছিল। খুব ভালো করেই টিকেছিল। কোনো প্রকার কথা কাটাকাটি মনোমালিন্য আমাদের সংসারে নেই। তাই তো তার দেহ আমার বেডরুমে রেখে দিয়েছি। মমি করে নয়, প্রেমি করে। মেকানিকের কাছে তাকে নিয়ে যাইনি। সার্ভিস দিয়ে সংসার ধরে রাখার মানসিকতা আমার নেই।
বৈঠক ঘর
শুদ্ধতার পথে আমার যাত্রা
লাভ লসের হিসাব তো এখন পর্যন্ত করতে পারিনি। লেখালেখি আমার চিন্তার আয়না, নিজেকে দেখি। মনে যে মাছ খেলা করে তাই লেখা নামক প্রতারক জাল দিয়ে পৃথিবীর খাতায় তুলে আনি। খুব পারফেকশনিস্ট যারা আছেন তাদের থেকে আমি বহুদূরে, আদর্শিক তেল হতেও আমি চাই না, আমি কেবলই আমার মনের খেলাকে বাইরের খেলার সাথে উপস্থাপন করে থ্রী ডাইমেনশনাল চোখে দেখার চেষ্টা করি। অনেকে আমাকে কবি বলেন, অনেকে লেখক, অনেকে দার্শনিক, অনেকে বাউল, অনেকে আবার মনে মনে পীর কেবলা ভাবেন, অনেকে আবার মহাব্যবস্থাপক উপাধিও দিয়ে থাকেন। অনেকে খুব ভালো মানের পাগলও বলেন। আমি কেবল তাঁদের শব্দের দিকে চেয়ে থাকি! কোথায় পাই তারা এতো শব্দ। একটি শব্দের [আমি] অর্থ আজ পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারিনি। আমার আমি যখন জীবন নামক সাগরে পড়ে তীর খুঁজে পাচ্ছে না তারা তখন এমসিকিউ
হারকিউলিসনীতি
বাজে কাজ করতে অভ্যস্ত আমি। যেকোনো বাজে কাজই ঘোষণা দিয়ে করতে আমার আপত্তিতে বাঁধে না। এমন নয় বাজে কাজ কেবল আমিই করি। আমার এককালীন গুরু কাজী নজরুলের সুরকথার মতো আমার ভেতরও রচিত হয় আত্মকথন— প্রভু, তুমি অন্তর স্থলের খবর জান ভেবে আমি লাজে মরি লোকচক্ষে ফাঁকি দিয়ে কি না ভাবি, কি না করি। বাজে কাজ এত শক্তিশালী যে পৃথিবী এখনো টিকে আছে বাজে কাজের জাগতিক মহিমায়। পৃথিবী শিশুময় হতে পারতো কিন্তু বাজে কাজের জন্য প্রাকৃতিক গান ফিল্টারিং হয়ে কানে আসে। ফলে আওয়াজ আর কেওয়াজ ভিন্ন পরিবারের লোক। অসংখ্য বাজে কাজের মধ্যে আমি যে বাজে কাজটি বিশেষভাবে করি তা হল ‘পড়াশোনা’। জনাব পড়াশোনার সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য লাইব্রেরিতে যাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরীতে। লাইব্রেরিতে জনাব পড়াশোনা বেশ জনপ্রিয়। লাইব্রেরিতে সব সময় গম গম, দম দম অবস্থা।
পীরে ঘুম
মানুষের দুটি কান, দুটি চোখ, একটি মুখ। না, আমি গরুর রচনা লিখতে বসি নাই। গরুর রচনার মতো একটি হিসাব করতেই চাই। হিসাবটা অবশ্যই প্রাকৃতিক। দুটি কান এবং দুটি চোখের কাজ গ্রহণ করা, একটি মুখের কাজ প্রকাশ করা। গ্রহণ করার কাজটি মানুষের, ব্যক্ত করার কাজটি ব্যক্তির। কিন্তু চোখের এবং কানের কাজটি মানুষ কিংবা ব্যক্তি মুখ দিয়েই করে থাকে। মুখের কাজ তখন থাকে কথার সাথে ফেনা অথবা থুথু বের করা। ফলে প্রচুর আজাইরা কথার মুখোমুখি হতে হয় প্রতিদিন। কথা প্রসঙ্গে একদিন এক হুজুরকে জিজ্ঞেস করলাম আপনার পীরের [গুরু] নাম কী? হুজুর উত্তর দিলেন— পীরে কামেল, পীরে তাহাজ্জুদ হযরত মাওলানা শাহ সূফী… (নাম) … নামের আগে ও পরে বিশেষণের অভাব নেই। আমি তখন তাকে বললাম ভাই সব বিশেষণের মানে বুঝলাম কিন্তু পীরের তাহাজ্জুদ মানে কী? হুজুর তখন আমাকে বললেন,
ময়লা ও খাবার
একদিন। গ্লাসের জলে একটি মাছি পড়ে। তার পাখা ভিজে যাচ্ছে এবং সে প্রায় জলে ডুবে যাচ্ছে। তার বেঁচে থাকার তীব্র ইচ্ছা তার ছটফটানিতে দেখতে পেলাম। তার প্রান রক্ষা করলাম। মাছিটি নড়তে পারছে না। তার শরীরে এমন একটি রং দিয়ে দিলাম যাতে হাজার মাছির ভীড়েও আমি তাকে সনাক্ত করতে পারি। সেদিনের মতো মাছিটি উড়ে গেলো। তাকে আমি পোষ মানাতে চাইনি। কারন মাছিকে কেউ পোষ মানাতে চায়না। এখন প্রতিদিন খাবার টেবিলে পৃথিবীর ময়লা নিয়ে সেই মাছিটি হাজির হয়। খাবার নষ্ট করে। আমি তার প্রতি রেগে যেতে পারি কিন্তু রেগে যায় না। কারন আমার কাছে যা ময়লা মাছির কাছে তা খাবার।
সংসারটা কার সাথে হবে?
অকারণে প্রেম হয়ে যেতে পারে। প্রেম দৃশ্যমানভাবে অকারণেই হয়। অকারণে হয়ে যাওয়া প্রেমকে কারণ করে তুলতে ভাবতে হয় বারবার ভাবতে হয় তারপর ভাবতে হয় অতঃপর ভাবতে হয় এবং ভাবতে হয় তারপর ভাবতে হয় আবার ভাবতে হয়। প্রেমে পড়ে কবিতা লেখা আর কবিতাকে নিয়ে সংসার করা এক কথা না। যাদের অনেক সম্পদ যারা পোশাক পরিবর্তনের মতো প্রেমিক প্রেমিকা পরিবর্তন করে তাদের হিসাব আলাদা। আমরা যারা গরীব ঘরের সন্তান। আমরা যারা একটা পোশাক ক্রয় করার আগে অনেকবার ভাবি মানে ক্রয়কৃত পোশাকটা দিয়ে ইদের নামাজ পড়তে পারব তো বা কোন বিশেষ অনুষ্ঠানে যেতে পারব তো, তাদের ভাবতে হয় বাধ্য হয়ে ভাবতে হয় সংসারটা কার সাথে হবে আর কার সাথে হবে না। প্রেম করার এখনই সময়, নতুবা আয়ু কমে যাচ্ছে বয়স বেড়ে যাচ্ছে!? বিয়ে বয়স আটকে ফেলে? মানে
একটি আলোর ঘর
ট্রেন চলছে। নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনপূর্ণ মানুষকে কাঁঠালের কোষ, কাঁঠালের কোষ মনে হচ্ছে। ষাটোর্ধ্ব চাচা প্রতিবেশী শরীরে হেলান দিয়ে দাড়ানো। মায়ের গর্ভের মতো এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা নেই। আন্ধার থেকে চুয়ে পড়া আলোয় কিছু মুখ, কিছু ইশারা সনাক্ত করা যায়। আড়িখোলা স্টেশন। মিস্টার লোকাল এখানে কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়। স্টেশনমাস্টারের রুম থেকে আসা তীর্যক আলো অল্পের জন্যে হলেও রেলকামড়াকে উৎসবমুখর করে তোলে। চাচার আঙ্গুল তখন দাড়িএলাকায় নিড়ানির কাজ করে। কাহা কৈ যাইবা? ফেনি। কাহা, তোমার আব্বা-আম্মার দেয়া নামডা কী? বাতিজা, গরিব মাইনসের আবার নাম। তাহলে গরীব মানুষ আমৃত্যু কোনো দিন বুঝবে না, সে আসলে গরীব নয়? তাকে যে বোঝানো হচ্ছে সে বা তারা গরীব এই কথা সে কোনোদিন জানবে না? সূর্য জেগে উঠার আগে সে উঠবে না জেগে? তাদের নামের গর্বও কেড়ে নিবে রক্তচোষা ফানুস! এই ভাবনায়
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ রাত
রমজান মাস। ষষ্ঠ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। কিছু একটা করতে হবে। অবশ্যই ভালো কিছু। আত্মা সমৃদ্ধ হয় এমন কিছু। আমি কিছু করতে চাইলে কখনো আমার পরিবার আপত্তি করেন না। সেই কারনে আমার পরিবারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। ইতেকাফ করবো। দশ দিনের জন্য। মসজিদে করতে পারি। কিন্ত মসজিদে যারা ইতেকাফরত থাকেন তারা পৃথিবীর বাইরে যেতে পারেন না। আমি পৃথিবীর বাইরে যেতে পছন্দ করি। এখনো আমি পৃথিবীর বাইরে চলে যাই দুই-একদিনের জন্য। পৃথিবীর বাইরে থেকে পৃথিবীকে যখন দেখি তখন কেমন যেন নিজেকে আলগা আলগা লাগে। রমজান মাসের বিশ তারিখ। ছোট্ট রুমটিতে বসে গেলাম। ইতেকাফরত দুনিয়াবি কথা বলা হারাম। দুনিয়াবি কথা তো দূরের বিষয় কথাই বলি না। একদিন একদিন করে পাঁচ দিন চলে গেলো। তারপর সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ রাত। রাত শ্রেষ্ঠ হলে ভালোই লাগে, কারন অন্ধকার
রোগ আর আরোগ্যের আলাপ
আমি। একটা সময়। খুব অসুস্থ থাকতাম। অসুস্থতা বলতে বড় ধরনের কোনো রোগ না। খুচরো রোগ। বারো মাসের মধ্যে চব্বিশ মাসই আমার ঠান্ডা লেগে থাকতো। পারত আমি এলোপ্যাথী চিকিৎসা করি না, হোমিওপ্যাথিতে আমি আস্তিক। একবার আমার জ্বর হয়েছিল। খুব জ্বর। একশত চার ডিগ্রি। তারপরও আমি এলোপ্যাথী চিকিৎসার কাছে বায়াত গ্রহন করেনি। হোমিও চিকিৎসা আমার মুর্শিদ। হোমিও কখনো রোগের চিকিৎসা করে না, হোমিও রোগীর চিকিৎসা করে। রোগীর চিকিৎসা বলতে মানসিকতার চিকিৎসা। হ্যাঁ আমি বলতে চাই বনের বাঘে মানুষকে খায় না মনের বাঘেই খায়। বনের ক্ষুধার্ত বাঘ যে মানুষকে পেলে খাবে না এমনটা না, পেলে অবশ্যই খাবে। রোগ মানে মানসিকতার বিশৃঙ্খলা। ঔষধ মানেও বিশৃঙ্খলা, প্রাকৃতিক বিশৃঙ্খলা। প্রাকৃতিক বিশৃঙ্খলাকে শারীরিক বিশৃঙ্খলা ধবংস করার জন্য পাঠানো হয়। যদি দুটি বিশৃঙ্খলা সমজাতীয় হয় তখন একটি আরেকটিকে বিকর্ষন করে মানে
মধ্যমদের রোগ
মধ্যমদের রোগের নাম হারানো রোগ। তারা হাসতে গেলে ভাবে এই বুঝি হাসি চুরি হয়ে গেল, প্রেম করতে গেলে ভাবে এই বুঝি মানুষ জেনে ফেললো, বাজার করতে গেলে ভাবে এই বুঝি হেরে গেলাম, বন্ধুর সাথে স্বাভাবিকভাবে মিশতে গেলে ভাবে এই বুঝি সংসার নষ্ট হয়ে গেলো। কথা বলতে গেলে ভাবে এই বুঝি হাজার বছরের (মানে পিতা এবং পিতার বাবার কাছ থেকে পাওয়া) জনপ্রিয়তা মারা গেল একেবারে মাঠে মারা গেল। গেলো গেলো। একেবারে গেলো। মধ্যমদের হারানো রোগের ভাইরাসের নাম ‘দেখে ফেললো, দেখে ফেললাম’। তারা মেপে মেপে কথা বলে, তাদের কাছে জীবনের ইঞ্চি ইঞ্চি মাপ। মাপতে মাপতে তারা জীবন ভুলে যায়— মাপের ভেতর তাদের জীবন ঘুরপাক খায়। আর উপরওয়ালাদের সে এক দারুন রোগ— ‘তালগাছটা তোমার না আমার’। নিচে যারা আছে তারা তো মহান— চাকার মতো কেবল ঘুরে আর