আজও মনে পড়ে তাকে। আজও মনে পড়ে তার সেই হাসি। আজও মনে পড়ে তার সেই চোখ। বাংলা বিভাগে ভর্তির যাবতীয় কাজ শেষ করলাম। এখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মনে আনন্দ আর আনন্দ। কলাভবনের দ্বিতীয় তলায় আমাদের বাংলা বিভাগ। রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ এই কড়িডোর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতেন, আমি এখন এই কড়িডোর দিয়ে পায়চারী করে রোদেলা সময় যাপন করবো। এতো আনন্দ আমি কোথায় রাখি! আনন্দ মনে গানে গানে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামি। ডিন অফিসের সামনের দরজায় বের হয়ে যাবো। দেখি ডিন অফিসের সামনে কস্টিউম করা সুন্দরী মেয়েরা ম ম পন পন বো বো করছে। এক সুন্দরী মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম ‘এখানে কী?’ মেয়েটি হাসিমাখা চোখে উত্তর দেয়— নাট্যকলা ও সঙ্গীতের ভাইভা হচ্ছে। ও তাই। জ্বী তাই। তারপর মেয়েটি আমার সম্পর্কে জানতে চায়লো। আমি আপনি আপনি আমার আনন্দের নিউজটা প্রকাশ করার
বৈঠক ঘর
কাজল রবি দাস ও রিক্সাওয়ালা
ক. কাজল রবি দাসের দোকানে গিয়ে চামড়া জুতা দেয়ার জন্যে বললাম। তিনি জেনুইন চামড়ার জুতা দিলো। সোল ব্যতীত জুতাটির আপাদমস্তক চামড়ার। দাদা কিসের চামড়ার এই জুতাটি? গরুর। গরু না আপনাদের দেবতা? এই সব কতা ইণ্ডিয়া গিয়া কন, ইডা বাংলাদেশ। চামড়ার জুতা পড়লে নাকি মাথা ঠান্ডা থাকে। দেবতার চামড়া থেকে যে জুতা নির্মান হলো সেই জুতা পায়ের নিচে পড়ে কেমনে মাথা ঠান্ডা রাখবো!? খ. রিক্সাওয়ালাকে বললাম আমাকে আজিমপুর কলোনিতে দিয়ে আসতে। টিএসসি থেকে আজিমপুর কলোনি। মামা ভাড়া কত? ৩০ টেহা দিলেও নিতে ফারমো, ৭০ টেহা দিয়াও নিতে ফারমো, আবার ২০ টেহা দিয়াও নিতে ফারমো। রিক্সাচালকের দরদাম শুনে আমি তো অবাক। আমি ৩০ টেহা দিয়া রাজি হইলাম। আল্লা গো! ইডা রিক্সা চলতাছে না, চলতাছে বিমান। মামা আস্তে চালান। মামা বেশি কতা কইয়েন না— যেমন ভাড়া তেমন চলন। রিক্সা থেকে নেমে আমি মোটামুটিভাবে আসমানের
ভয়ে মরতে চাই না
ভূমিকম্পে পুরো বিল্ডিং কেঁপে ওঠল, আমি খাচ্ছিলাম, খেতে থাকলাম, হাউমাউ কান্না পুরো বিল্ডিং ছড়িয়ে গেল। আমি তখনো খেতে থাকলাম। ভূমিকম্প থেমে গেলো। আমি তখনো খেতে থাকলাম। পুঁটিমাছ ভাজি আর ভাত। বিল্ডিং ভাঙেনি। তাদের ভয় পাওয়া আর কান্নাকাটি লজ প্রজেক্টে লেখা হলো। মরে যাবো একদিন নিশ্চিত কিন্তু ভয়ে ভয়ে মরতে চাই না। ভয় মৃত্যুর ঔষধ নয় বরং ভয় মৃত্যুর এসিস্টেন্ট। মরে যাবো একদিন নিশ্চিত কিন্তু ভয়ে ভয়ে মরতে চাই না। মরে গেলে আমার জন্য কেউ দোয়া করবেন না, দোয়া করবেন তাদের জন্য যাদের পাশে আমি দাঁড়াতে চেয়েছিলাম।
প্রয়োজনে দূরেও যাওয়া
দুই হাজার এগারো সালে আমি একখান কম্পিউটার কিনি। দুই হাজার তের সাল পর্যন্ত তার সাথে আমার সম্পর্ক ভালোই ছিল। দুই হাজার তের সালের পর তার সাথে আমার সম্পর্ক অনিয়মিত হয়ে পড়ে। যেহেতু আমি ব্রেকআপ নীতিতে বিশ্বাসী না সেহেতু বলতে পারছি না তার সাথে আমার ব্রেকআপ হয়েছিল কিংবা বলতে পারছি না পিরিতি ভাঙিয়া গেলে নাহি লাগে জুড়া। আমার প্রিয়তমা কম্পিউটার আরামসে ঘুমে ব্যস্ত, আমিও তাকে কোনো প্রকার বিরক্ত করতাম না। সে যেখানে ঘুমিয়ে থাকতো সেখানেই আমি আমার দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিসপত্র রাখতাম। তার কানের কাছ দিয়ে আমার হাত চলাফেরা করত কিন্তু কখনো তার শরীরে হাতের স্পর্শ সজাগ করেনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস ছিল আমি ডাক দেয়া মাত্র আমার প্রিয়তমা কম্পিউটার কাজ করতে আরম্ভ করবে। অনেক কম্পিউটার বিশারদ আমাকে অনেকভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছে। আমি ভয়
মানুষকে ভালোবাসা শেখাতে হয়
আমি প্রতিদিন রাতে একগ্লাস জুস খাই। পেঁপের বা আমের বা কলার জুস। একটি দোকান থেকেই খাই। পকেটে যেহেতু টাকা এবং মনভর্তি স্বাধীনতা আছে সেহেতু যে কোনো দোকান থেকেই খেতে পারি। কিন্তু খাই না। যেখানেই থাকি জুস খাওয়ার জন্য আমি সেই দোকানে চলে আসি (ঢাকা থাকলে)। লেনদেন আমি একজায়গা থেকে করতে পছন্দ করি। আমার মোবাইল কোনো কারনে অন্য চার্জজার দিয়ে চার্জ দিলে মোবাইল গুসসা করে অনেকটা বাংলা সিনেমার এককালীন চমৎকার অভিনেত্রী শাবানার মতো। সে তখন ভালোভাবে কাজ করতে চায় না। তাই যেকোনো লেনদেনে আমি বহুগামীতা পছন্দ করি না। একবছর যাবৎ আমি সেই দোকান থেকে জুস খাচ্ছি। কিন্তু দোকানদার আমার সাথে অন্য কাস্টমারের মতোই আচরন করে। প্রতিদিন দোকানে গিয়ে আমাকে বলতে হয়, ভাই প্রয়োজনে টাকা বেশি নেন কিন্তু আমার জুস যেন ভালো হয়। সে
আফালের মাছ [ ৬ ]
মৃত্যু এক পর্যটন নগরী, প্রাণী বাধ্যগত পর্যটক মায়ের জাত এখনো ঘরকেই জয় করতে শিখেনি, আর বাইরে তো তুমুল বৃষ্টি শিশুদের চোখ নিষ্পাপ নগরী, শিশুদের হাসি হৃদয়ের ঢেউ প্রতিটি ভ্রমণ একটি জন্মের কথা বলে, প্রতিটি রমণ একটি ভ্রমণের কথা বলে প্রেমিকা বানরকে পছন্দ করে, প্রেমিককে মনে করে খোপার বেলী ফুল মানুষের হাসির নিচে থাকে স্বার্থ, কান্নার নিচে আমিত্ব প্রত্যেক নারী সাবজেক্ট- ভার্ব-অবজেক্ট, প্রত্যেক পুরুষ অবজেক্ট-ভার্ব-সাবজেক্ট রাত মানে অন্ধকার নয়— চোখের অসুখ Night is not the collection of dark body; very limitation of the eye রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কেমন করে যেন ঘরের ভেতরের কথা খুব সহজ করে বাইরে নিয়ে এসে ফুলেল গন্ধময় করে তুলেন, বাইরের কথা ঘরে নিয়ে এসে ভীষন সুন্দর পূজাঅর্ঘ প্রতিমা করে তুলেন আলোর খুব কাছে থাকে পোকামাকড়— আলো থেকে
আফালের মাছ [ ৫ ]
শরীরের কোন অংশে ক্যানসারের ভাইরাস পাওয়া গেলে তা কেটে ফেলে দিতে হয়। ডাক্তার তাই করেন। জীবন বাঁচাতে গেলে ডাক্তারকে এমন অনেক নিষ্ঠুর কার্যাবলী অত্যন্ত দক্ষভাবে সমাপ্ত করতে হয়। প্রয়োজনে নিষ্ঠুর হওয়ার নাম মানবিকতা। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশে রোগীর চেয়ে ডাক্তার বেশি। আপনার সন্তানকে নিয়মিত সহনশীলতার টিকা দেন যাতে সে গনতান্ত্রিক মানুষ হয়ে ওঠতে পারে। শিক্ষিত ছাগল শেষ পর্যন্ত মানুষ হয়ে ওঠতে পারে কিন্তু গনতান্ত্রিক ছাগল শেষ পর্যন্ত মানুষের হয়ে ওঠতে পারে না। Things end but thoughts survive যাদের গার্লফ্রেন্ড অথবা বয়ফ্রেন্ড নেই তাদের গার্লফ্রেন্ড অথবা বয়ফ্রেন্ড শয়তান অনেকেই আমাকে ম্যাসেজ দেয় ‘শুভ রাত্রি’। তারা শুভ এবং রাত্রির মাঝখানে ফাঁক রাখে। কিন্তু আমি জানি শুভ এবং রাত্রি বিবাহিত। তাই তাদেরকে আলাদা রাখতে চাই না অন্তত রাতের বেলায়। তাইতো আমি ম্যাসেজ পাঠাই
আসলে মানুষ, নির্ভরশীল
জিন্দেগি বহৎ কুছ সিখাতে হে কাভি হাসাতি হে কাভি রোলাতি হে হুদছে জাদা কিছিপে ভারোসা মাত কার না আন্দেরে সে তো পারছায়ি বি সাত সুর ঝাতে হে অন্ধকারে নাকি নিজের ছায়াও নিজের সাথে থাকে না। আমি বলি অন্য কথা। অন্ধকারে ছায়া আর আমি এক হয়ে যাই। বিপদ আসলেই নিজের চরিত্র আয়না হয়ে যায়। নিজেকে তখন নিজের চোখে দেখা যায়। কষ্টের ভেতর থাকে অন্য রকম মানব জীবন। কষ্টের গানই মূলত গান। কষ্টের কথাই মূলত পৃথিবীর আদি কথা। মানুষকে অবশ্যই মানুষের উপর বিশ্বাস, ভরসা রাখতে হয়। একজন বিজ্ঞানীর সাথে একজন কৃষক জন্মগতভাবে থাকেন। কারণ কৃষকের উৎপাদিত ফসল বিজ্ঞানীকে ভোগ করতে হয়। একজন কৃষকের সাথে একজন তাঁতী বাধ্যতামূলকভাবে থাকেন। কারণ কৃষককে কাপড় পরিধান করতে হয়। একজন তাঁতীর মাঝে একজন ডাক্তার থাকেন। কারণ তাঁতীকে ঔষধ সেবন করতে হয়। আসলে মানুষ
দ্বিতীয় মানুষ
প্রজাপতি, তোমার গিফট হাতে পেলাম। চমৎকার কারুকার্যখচিত আল্পনা। অনেকক্ষণ হাতে তৈরি খামের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,তাকিয়ে ছিলাম খামের ভাঁজে ভাঁজে যে স্পর্শ লুকিয়ে আছে তার দিকে। চোখে নাকি মন থাকে, আমি বলি চোখে থাকে জীবন। তাই জীবন দিয়ে খামের জীবনকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। উপলব্ধির জায়গায় আমি চমৎকার মানুষ, প্রকাশের জায়গায় এখনো আশাবাদী হয়ে ওঠতে পারি নি। বেশি ফুলের নাম জানি না। কারণ আমার শৈশব কেটেছে সরিষার ফুলের গন্ধে। তা ছাড়া তথ্যগত জায়গা থেকে আমার শৈশব ততটা শিক্ষিত না। তারপরও তোমার পাঠানো খামের প্রচ্ছদে নীরবে শুয়ে থাকা অজানা ফুলের দিকে আমার চোখ। ফুলের মাঝখানে ‘প্রজাপতি’ শব্দটি আমাকে মারাত্মক প্রেমিক করে তোলে। প্রিয় নাম যে ফুলের চেয়েও সুন্দর হতে পারে, হতে পারে ফুলের চেয়েও সুগন্ধী আমার জানা ছিল না। তার উপরে প্রিয় নামটি প্রিয়ার নিজ হাতে
ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ী
সাপ একবার বলল তোমরা আপেল খাও, তারপর থেকে তারা বারবার আপেল খেতে লাগলো। আপেল খাওয়ার কারনে পৃথিবী নামক দ্বীপে তাদেরকে নির্বাসন দেয়া হলো। তবুও তারা আপেল খাবে। জান্নাতে যেমন সাপ ছিল পৃথিবীতেও সাপ আছে। তবে পৃথিবীতে সাপ এসে ব্যবসায়ী হয়ে গ্যাছে– মাছ ব্যবসায়ী, গাইড ব্যবসায়ী, শিক্ষা ব্যবসায়ী, গান ব্যবসায়ী, ধর্ম ব্যবসায়ী, কর্ম ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী এবং ব্যবসায়ী।