ট্রেনে দাঁড়িয়ে আছি। কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হবে কেউ জানে না, না লোকোমাস্টার, না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি সময় উৎযাপন করার পক্ষে। তাই যেই অবস্থায় আছি শুকর আল হামদুলিল্লাহ। অসহ্যবোধ করা সহজ, কারণ তাতে চেষ্টা লাগে না। আমি তো মানুষ। চেষ্টার মধ্য দিয়ে আজকের মানুষ যুক্তিশাস্ত্রের মুক্তি দিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছে। তাই চেষ্টার দরজা-জানালা খুলে দিয়েছি। আমার পেট বরাবর ষাট বছর বয়সী এক চাচা। তিনি চিপস খাচ্ছেন। দৃশ্যটি বেশ এটাকটিভ। হঠাৎ চাচুর ফোন আসে। তিনি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। চাচু দাঁড়ানোর সাথে সাথে তাঁর বুড়ি সমেত পেট মহাশয় আমার স্লিম পেটে ধাক্কা মারে। আমার পেট অসহায়। কারণ তার পেছনে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিছুক্ষণ পেটে পেটে ঘষাঘষি খেলায় অনুভূতির নতুন মাত্রা যোগ হল অভিজ্ঞতার খাতায়। চাচুর পাশে একজন পুরুষ। বয়স চল্লিশ হবে।
গল্প
পেটুক বাবাজী, অভুক্ত ভক্ত
সবাই বলে বাবাজী অল্প খায়। আমিও তাই দেখি। কিন্তু বাবাজী না খেয়ে স্বাস্থ্য এতো ভালো রাখেন কীভাবে? সারা শরীরে শুধু মাংস আর মাংস। টুল মাংস মিনিমাম আশি কেজি তো হবেই। অনেক ভক্তপ্রাণ মুরিদও বলে বাবাজীর খেতে হয় না। বেশি খেলে আত্মা মারা যায় এমন ওয়াজ বাবাজীও করেন। ধরেই নিয়েছি জান্নাতের সাথে বাবাজীর সরাসরি যোগাযোগ আছে। জান্নাতী খাবার অল্প হলেও হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ। আল্লার ফেরেশতা নিশ্চয় খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মেশায় না। আমারও ফরমালিনমুক্ত খাবার খেতে তীব্র ইচ্ছা। তাই বাবাজীর শিষ্যত্ব গ্রহণ করলাম। তাঁর সাথে সাতদিন ছিলাম। আমার শরীরের মাংস দুই কেজি বেড়েছে। তাহলে কী বাবাজী আমার জন্যও জান্নাতের রেস্টুরেন্টে খাবারের বিশেষ ব্যবস্থা করেছিলেন? অবশ্য, কেন নয়! দয়াল বাবা কেবলা কাবা! তবে দয়াল বাবার জান্নাতের নাম সাধারণ মানুষের বিশ্বাস। দয়াল বাবা সরল মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে শরীরের মাংস
স্বাধীনতার মানে
গল্পটা বলা যেতে পারে। গল্পটা অনেকটা ধূসর রঙের, ধূসর রং কেমন করে লাল রং, লাল রং কেমন করে সবুজ রং মানে পৃথিবী হয়ে ওঠে গল্পটা অনেকটা তেমন। তাহলে বলছি। আমি তখন গ্রামে থাকি। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। স্বাধীনতার অনেক গল্প শুনি। কিন্তু স্বাধীনতার মানেটা বুঝে ওঠতে পারি না। স্বাধীনতার মানে যখন বুঝি না গল্পটা তখনকার। পিয়ারা গাছের নিচে সাবান রাখা। সাবানটা জালি দিয়ে মোড়ানো। জালি মানে একধরনের চিকন জাল যা দিয়ে গ্রামের মানুষ শরীর ঘসে ঘসে ময়লা সাফ করে। সাবানের প্রতি কাকের এক বিশাল আকর্ষন রয়েছে। বাঙালি সমাজে যেমন খিচুড়ি প্রিয় কাক সমাজে তেমনি সাবান প্রিয়। এক ছোঁ দিয়ে কাক সাবানটিকে গাছের ঢালে নিয়ে গেল। নিয়ে খুব মজা করে সাবান খাচ্ছে তো খাচ্ছে। জালি প্রথমে কাকের ঠোঁট দখল করল, তারপর মাথার পুরোভাগ। এবার
উপলব্ধি
মাই টিভির সামনে সমির চা-স্টল। চা-স্টল হলেও সকালে নাস্তা তৈরি করা হয়। বাংলামোটর দিয়ে যাচ্ছি, চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছে বেশ। চা খেতে আমি সমির চা-স্টলে। চা দিতে যথেষ্ট লেইট করছে। মামা, চা খেতে মক্কা যাওয়ার সময় লাগবো নাকি? বহেন, লেইট অইবো। তাড়াতাড়ি দাও। সইয়া-রইয়া খাইতে চাইলে বহেন নতুবা চলে যান। আমার উপরে এমন কথা! ওর সাহস দেখে অবাক হলাম। আবার ভাবলাম মূর্খ মানুষ অধিক সাহসী হয় [হাতি ঘোড়া গেল তল/ভেড়া বলে কত জল]। আমার ডান পকেটে Ak47, বাম পকেটে যে বাংলাদেশ ব্যাংক থাকে এই খবর হয়তো সমিরের নেই। উঠে চলে আসছি এমন সময় একটি শব্দ কানে আসে— যতসব বেহুদা মানুষ। মাথাটা আর ঠিক রাখতে পারলাম না। সমিরের মাথাটা হাসপাতালে পোস্টিং করে দিলাম। তার ফাটা মাথা এখন হয়তো চিন্তা করতে পারবে বেহুদা মানুষ
বৃষ্টির খেলা হৃদয়ের কথা বলে
জেগেই দেখি সকালটা নরম নরম। নরম নরম সকালে গরম পায়ে ক্লাসের দিকে গেলাম। আটটায় ক্লাস। ঘুম থেকে উঠলাম আটটায়। দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই প্রাথমিক ফ্রেশ হওয়ার কাজটি শেষ। গিয়ে দেখি ক্লাস চলছে। তবে সামনের দরজা খোলা। অনুমতি না নিয়ে ঢুকে পরলাম। অনুমতি নেয়নি। অনুমতি নেওয়াও একপ্রকার বিরক্তিকর কাজ। তবে টিচার ক্লাসে অনুমতি নিয়ে প্রবেশ করতে পারে, অনুমতি সাপেক্ষে প্রবেশ করলেই বিষয়টি নান্দনিক। টিচার ক্লাস নেয়ার আগে আমাদের হাজিরা নেন। প্রতি হাজিরার জন্য টিচার ০.১৭ মার্কস বরাদ্দ রাখেন। আমরা তো মুনির জাত, তাই হাজিরা পেলেই সন্তুষ্ট। হাজিরা কি পরিমাণ দেওয়া হচ্ছে, কেন দেওয়া হচ্ছে, কী উপায়ে দেওয়া হচ্ছে— এই বিষয়গুলো ভাবনার সময় আমাদের নেই। ভাগ্যের সুযোগে একবার কয়েদি হয়েছিলাম। কয়েদ মানে একটি জায়গা যেখানে থাকতে বাধ্য করা হয়; সকাল-সন্ধ্যা হাজিরা ডাকা হয়। তবে সেখানে হাজিরার জন্য
আমি এক এমরানুর রেজাকে চিনি
আমি এক এমরানুর রেজাকে চিনি যার বাড়ি মেঘনা নদীর তীরে। সে কত কিছু করে, সব কিছুই ডেমো। তার ডেমোকে ট্রেন মনে কইরা অনেকে ওঠে বসে। সময় ফুরিয়ে যায়, মাগার ট্রেন তো চলে না। একসঙ্গে যাত্রী সকল গালি দিয়া নাইম্মা পড়ে এক সময়। এমরানুর রেজা তখন মাথায় গামছা বেঁধে মেঘনা নদীতে নৌকা চালাইতে যায়, গুদারা ঘাট থেইক্কা ডাক আহে— এই মাঝি নিয়া যাও, নিয়া যাও। নারী কণ্ঠের ডাক। এমরানুর রেজা তখন হালুবালু কইরা গুদারা ঘাটের দিকে যায়। নারী নৌকায় ওঠে— হিলহিল কইরা হাসতে থাকে মাঝির বইটা। বইটা চালাইতে চালাইতে মাঝি ক্লান্ত হয়ে যায়, দূরে কিনারা দেখা যায়, কিনারার লাগাল পাইনা মাঝি। নদীর মাইদদে নৌকা থেমে যায়। আতকা আচানক এক বাতাস আহে, ঘূর্ণি বাতাস— এমরানুর রেজা, তার নৌকা আর সেই নারী কোথায় যেন হারিয়ে
মানবচরিত্র
সনাতন। আমার গ্রামের ছোট ভাই। ঢাকা ব্যবসা করে। ইদানিং সে বিদেশেও ব্যবসা করা শুরু করেছে। ওর লগে আমার আবার হাতির টাতির একটু ভালো। ও আবার আমার ছাত্রও বটে। ও যখন প্রেম করতো তখন থেকেই আমার পরামর্শ টর্মাশ নিতো। বিয়ে করার আগে অবশ্যই আমার পরামর্শ লই নাই। কারন আছে। উনিশ বছরের সনাতন বিয়ে করবে অবশ্যই আমি মেনে নিতাম না। সনাতন আবার বউরে খুব ভালোবাসে। বউয়ের লগে ফেইসবুকে ছবিটুবি দেয়। সনাতন আর আমি যেদিন বাড়ি গেলাম সেইদিন গ্রামের এক জ্ঞানী টাইপের লোকের লগে দেখা। লোকটি সনাতনকে দেখেই বলে— ‘বউয়ের লগে ফেইসবুকে ছবি দেয়া ঠিক না, আর দিস না।’ সনাতন কথাটা নিতে পারেনি। সে বলে ওডে, ‘বউরের লগে ছবি দিমু না ত কার লগে দিমু, অন্য বিডির লগে তুইল্লা ছবি দিমু?’ ‘বলছি দিস না, বউয়ের লগে ছবি দেয়া
রাজকোষ ও লাঠিয়াল
রাজ্যে নতুন আইন হলো। এক রাজ্যে। অবশ্যই সেখানে এক রাজা ছিল। একদা এক রাজা ছিলেন। রাজ্যের আয়তন খুবই ছোট ছিল। এক লক্ষ সাত চল্লিশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের মতো। জনসংখ্যা ছিল খুবই কম। মাত্র বিশ কোটি। যেহেতু আয়তন ও জনসংখ্যা খুবই কম ছিল সেইকারনে প্রজাদের খাবার রাজকোষ থেকেই দেয়া হতো। রাজা নতুন আইন করেন। আইনে বলা আছে সকালের নাস্তা প্রজাদের দেয়া হবে না। রাজা মনে করেছিলেন তিন বেলার খাবার খেয়ে প্রজারা শক্তিশালী ও বুদ্ধিমান হয়ে যেতে পারে যা তার আসনের জন্য হুমকি স্বরূপ। কিন্তু রাজা প্রেসব্রিফিং করে জানালেন অন্য কথা। রাজা নাস্তা বন্ধ করার ব্যাপারে যে কথা জানালেন তা আপনাদের না জানলেও চলবে। আমাদের মসজিদের হুজুর বলতেন ‘সব কথা জানতে নেয়, সব কথা বলতে নেয়।’ কেউ কেউ রাজার নতুন আইনকে ভগবানের আইন বলে
তাবির
তাবির। তার নাম। তাবির তার নাম। সন্ধ্যা হলে বাবলা গাছের সরাসরি নিচে আসেন। পাখি তখন ঘরে ফিরতে শুরু করে। শব্দধ্যান। তাবির এই সময় শব্দধ্যান করেন। বাবলা গাছের পাশেই তার ঘর। ছোট্ট একটা ঘর। একজন থাকতে পারে এমন ঘর। রুমও বলা যেতে পারে। তবে ঘর বলা সুবিধাজনক। কয়েকদিন পর পর এক মহিলা বাবলা গাছের সামনে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। তাবিরকেই গালিগালাজ করে। তাবির তখন ঘরের ভেতরে পরমের ধ্যানে মগ্ন। কোনোদিন আবার খুচরো কাজে ব্যস্ত থাকেন। কোনোদিন তাবির মহিলার সাথে অংশগ্রহন করেন। তাবির গালিগালাজ করেন না। মহিলাকে গালিগালাজ করার সুযোগ করে দেন। মেজর। তাবিরের বন্ধু। সে প্রায়ই তাবিরের বাবলা গাছের নিচে আসে। রাগ প্রকাশ করে মেজর। মহিলার প্রতি রাগ প্রকাশ করে। মহিলাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিতে চায় মেজর। তাবির নিষেধ করে। অনেকদিন হয়ে
গড় হিসাব আর বোরখার গল্প
বোরখা বিক্রি বাজারে বেড়েছে। মুসলিম মুমিনার সংখ্যা বাজারে বেড়েছে। এখন প্রত্যেক ঘরে ঘরে জন্ম নিবে আল্লার অলী। কারন মা যদি হয় মরিয়ম সন্তান হবে ইশা রুহুল্লাহ, মা যদি হন আমেনা ছেলে হবেন হযরত মোহাম্মদ ()। যেহেতু পর্দা নারীর হাতপায়ের মতো আরেকটি গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ সেহেতু পর্দানশীল নারী ব্যতীত ফরহেজগার সন্তান আশা করা যায় না। জান্নাতের প্রত্যেক বিভাগে পর্দানশীল আমার বান্ধবীরা থাকবেই থাকবে ইনশাল্লাহ। এতক্ষন একটি গড় হিসাব হাজির করলাম। গড় হিসাব, মাথাপিছু আয়, জাতীয় আয় প্রভৃতি হিসাব অনেক সময় হাস্যকর। ধরেন একটি দেশে দশজন মানুষ। দুইজন মানুষের কাছে আছে দশ হাজার টাকা, ছয়জনের কাছে দুই হাজার, একজনের কাছে একশ টাকা, এক জনের কাছে কোনো টাকাই নাই। গড় হিসাব করলে যার কাছে টাকা নেই তার মাথায়ও একটি বিশাল অর্থপরিমান চলে আসবে, অথচ লোকটির