বাতাসে কান পেতে থাকি তোমার শব্দগন্ধের আশে দরজা যখন বন্ধ হতে চায় আমি তো তারে ন থামাই ন থামাই দরজা যখন বন্ধ হয়ে যায় ‘গম আছো নি বা’ মুই ন জিগাই মুই ন জিগাই আসমানের লগে মেঘের লগে কথা কইতে কইতে তোমার বাড়ির উঠোনে নেমেছি কাগজের বিমানে বৃষ্টি ভেবে আঁজল ভরে মুখে তুলে নিয়েছো তুমি ঠোঁটের পাশ বেয়ে তোমার কর্কটক্রান্তিরেখা বরাবর নেমে গেছি নিচে আরও আরও নিচে একেবারে বিষুবরেখা হয়ে সমুদ্রের তলতলানিতে তারপরও তুমি জানলে না তারপরও তুমি মানলে না— এসেছিলাম আমি তোমার কাছেই এসেছিলাম দরজা বন্ধ করে দিলে আস্ত একটা শব্দ হলো পরিযায়ী পাখি সারারাত তোমার বাড়ি তোমার ঘর তোমার আঙিনায় একবার ছাদ খুলে দেখলে না ঘুম তোমার ভাঙলো না ভাঙলো না কেউ যখন ঘুমিয়ে যায় আমি তো তারে ন জাগাই ন জাগাই তোমহার লগে হামার একখান কথা আছে হামি তোমহারে কেমনে বুঝাই কেমনে বুঝাই কেউ যখন বুঝতে না চায় আমি
কবিতা
আকাশ কিনবো নদীর পাড়ে
আমি একটা আকাশ কিনবো নদীর পাড়ে চাঁদের আলোয় তিল বসাবো নীলের গায়ে হলুদ কালার আলো থাকবে জল বরাবর জলের নিচে মাছের আবাস সুখ তরাতর বৃষ্টি এলে প্রেমের চালে শব্দ হবে চুলগন্ধ ফুলের চালে নাকে যাবে সবুজ একটা পাহাড় নামবে দূর জানালায় মেঘের একটা নহর নামবে ঘাটু ঝরনাগায় মধ্যরাতে তারার দল রীতিমতো দিবে কল সবুজ হাসি মনের দেশে উঠোন পথে চলবে হেসে আঙ্গুল আমার তোমার ক্ষেতে করবে চাষ রাত বিরাতে সবুজ একটা আলো এসে পড়বে তোমার নরম ঠোঁটে আমি তখন গরম বাতাস শরীর তোমার তুলার তাস আমি একটা বাড়ি করবো নদীর জলে তোমার সাজে ঠিক তখন আমার আকাশ সজল এক প্রেমের লাজে
কে আছো জলের মতো
চাঁদ কোনোদিন কোনো প্রানিকে তার দিকে নজর দিতে বাধ্য করে না। প্রানিকে তার প্রয়োজনে চাদের দুধসাদা জোছনার কাছে নতজানু হয়ে বসতে হয়। সূর্য কোনোদিন কোনো মানুষকে ঘুম থেকে জেগে কাজে মনোযোগী হওয়ার কথা বলে না। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সূর্যধর্মে নিজের কর্মধারা পরিচালনা করে। জল ডাকে না মানুষকে তার দিকে। মানুষ নিজের তৃষ্ণায় জলের দিকে ধাবিত হয়। ফুল ভুলেও ডাকে না কাউকে তার ঘরে তার সংসারে। কে আছো চাদের মতো কি আছো সূর্যের মতো কে আছো জলের মতো আমাকে ভাষা দিয়ে নয়, প্রয়োজনে টেনে নাও তোমার দিকে— তোমার ভেতরে আরও আরও গভীরে— ফুলের ❀ মতো গন্ধে ছন্দে ভাষাহীন ভাষায় বসাও হৃদয়ের নরম হিতানে।
এ কেমন ব্যথা!
ব্যথা মাথা থেকে আস্তে আস্তে নিচে নামে। এ কেমন ব্যথা! বুকের বাম পাশে একটি অদৃশ্য দহন। সাদা শাড়ি গলায় দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে যে নারী সেই জানে এ ব্যথা কেমন। চোখের জলে এই ব্যথা ধীরে ধীরে কর্মহীন হয়ে পড়ে। কর্মহীন ব্যথা আবার স্মৃতির পাতায় ঢেউ তোলে। ঢেউয়ের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে আমাদেরও ছিল সোনালি সময়, লকলকে লাউয়ের ডগার মতো সবুজ এক সময়। ব্যথার সাগর পাড়ি দিয়ে বন্ধুর বাড়ি যাই, বন্ধু আমার বরফগলা শীতের দেশের সাঁই।
কোনো এক বর্ষার রাতে
কোনো এক বর্ষার রাতে নদীর দারে কোনো এক ঘরে মাথার উপরে বৃষ্টির চাল— তোমাকে ডাকি যদি আসবে? জানালা চোখে ঢেউ দেখা যায় এক ঢেউয়ের উপর আরেক ঢেউ, আরেক ঢেউয়ের উপর অন্য কোনো ঢেউ ভাসবে? দুটি হাঁস ভাসতে ভাসতে ভুলে গ্যাছে বাড়ির ঠিকানা আমাদের ঘরে তখন একটানা বৃষ্টি, হিমশীতল বাতাস তুমি আসলে, ভাসলে, ভাসালে অনেকদিন পর তুমি অনেকের কথা ভুলে গেলে অনেকের কথা মাথায় নিয়ে তুমি হয়েছিলে মুদির দোকান আজকে তুমি শব্দটি আমার, কেবলই আমার, আজকে আনন্দ আমার বেদনার সমান
আমি ভাসমান পথিক
পাখিরা জাহাজে উঠেছে জাহাজ যৌবনের প্রতীক বন্দরের রাবণরা খুব বেশি ভয়ানক আমি ভাসমান পথিক পাখি হলাম না, মাছ হলাম না, না হলাম ভয়ানক পুরনো মোড়কে আমি আধুনিক আদম মন বিলিয়ে বানিজ্য করি নিত্য সত্যচরাচর চকচকে আয়নায় তেলকাড়া হাসি রুমালে বাধাই তাইতো মদ হবো কাচা মদ সারা শরীরে দেশীয় আমেজ মাতাল করে গান শোনাবো পৃথিবীডা পাগলামির ইমেজ
পরিশ্রমের সামান
মাঝি নৌকা চালাবে— চালাও। ঘাটে বসে আছে মহাজন কাহা। পাই টু পাই আদায় করবে পরিশ্রমের সামান। পরিশ্রমে কোনো কালে ধন আনেনি। ধন বাবাজী কিসমতের খেলা। কে কত ঠকাতে পারে সেই কিসমত। কিসমত একবার বাজিমাত হলেই ঘাটে বসে থেকে থেকে টেহা আর টেহা, পান চিবানো টেহা। মাঝি, তোমার ঘামের তেলে যে বৈঠা চলে সেই বৈঠার মূল্য কোথাও নাই— ঘাটে, মাঠে, পথে, রথে এমনকি তুমার ঘরেও না। মহাজন তুমারে হাটাবে, বলদের মতো হাটাবে। তারপর কইবো যাও বলদ গোয়ালে গিয়ে একটু রেস্ট নাও, বনের রেসিপি দিবে। বন খেয়ে খেয়ে মাঝি আবার ঘুমাবে, ঘুম থেকে ওঠে দেখবে গামলাই পড়ে আছে হাজার বছরের ঐতিহ্য— ভাতের ফেন।
এখন তুমি ঘুমাও
যো ন হৃষ্যতি ন দ্বেষ্টি ন শোচতি ন কাঙহ্মতি। শুভাশুভপরিত্যাগী ভক্তিমান যঃ স মে প্রিয়ঃ।। রাত অনেক গভীর। ফেনোবারবিটন। গভীর এক বেদনাবোধ কাজ করে মনে। রাত অনেক গভীর। ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা। ঘুমানো হচ্ছে না। সকাল হবে। সকালের চেয়ে ভোর শব্দটি দ্যোতনাময়, আশাবাদী। ভোর হবে। অনেকদিন হলো একটি তাজা ভোর দেখি না। রাতের আকাশে অনেক তারা। আকাশে অনেক তারা হলে একদল নদী চোখে আসে। আজকের আকাশে চাঁদও বেশ সুন্দরী। মনে আমার অমীমাংসিত বোধ কাজ করে। অমীমাংসিত বোধে প্রশান্তি হাঁটতে আসে না, পরবাসী কেউ তো আরও সাহস পায় না। আজকাল মানুষকে ফেনা মনে হয় যা ঢেউফল। অথচ ফলাফলের আশায় অনেকদিন ধরে বসে আছি ডাকঘরে— চিঠি আসবে সবুজ খামে সবুজ কালিতে পাতায় পাতায় বেলুনের কারুকার্য। চিঠি আসে না— ইহা আধুনিক সময়। এখন কেউ ডাকপিয়নের কাছে অপেক্ষা জমা রাখে
নীরব বসে থাকা
বোধের সাজানো বাসর
কাক কাকের মতে উড়ে তাল তালের মতো পড়ে নদী নদীর মতো বহে শিশু আপন মনে কাঁদে গতির উপরেও গতি বলে কিছু একটা থাকে থেমে থেমে আসে বোধ— বোধের সাজানো বাসর তরমুজের ব্যবসা করে যে লোকটা সেও জানে তরমুজ মানে লাল আর সবুজ জলকেলি মাংসের ভেলকি— তরমুজ জানে অন্যকিছু— অন্যরকম আলোর মতো কালো হয়ে আসে চিন্তার ঋতু। ব্যবসার ভাষায় কথা বলতে পারে না যে লোকটি সে বড় বোকা সমাজের কাছে— কিছু হয়ে ওঠে না কিছুই হয়ে ওঠে না ঘোড়ার ডিম টাইপের কিন্তু সময়ের কাছে সে যেন স্মার্ট এনাফ। কার কাছে কি কতা কমু চোখের কাছে চোখ বড় একা দরজা খোলা থাকে জানালায় বন্দী থাকে কিছু অপেক্ষা