জীবনের সব স্তর শেষ হয়ে গেলে বনলতাপৃথিবী কাছে আসে, কাছে এসে বলে এতোদিন কোথায় ছিলেন? সব সুখ উড়ে যায় বাতাসে— প্রচন্ড ব্যথায় আকাশও বুক খুলে বসে, গোপন গল্পরা রাতচোখে সবুজ আনে বনঘাসে। নরম মাংসের মতো হৃদয়ের গভীরে হাঁটে চাঁদের বাজার— মানুষ মানে একটা হাইফেন একটা নিছক কাগজের মেলা। অনেক অল্প অভিধানে মাথার ভেতর খেলা করে শব্দের পিকনিক, অবস্থান ত্রিমোহনী সুরে বাতাসের পরিবারে কালভার্ট আঁকে— মানুষ মারে মানুষ বাঁচায়। ধর্মঢাল চোখের আগে চলে রোবটের মতো— রাত নাই ভোর নাই দুপুর নাই এক কথাতে সারাক্ষন। ভয়ের বাজারে একমাত্র দ্রব্য পরকীয়া পরকাল, ভয়ের বাজারে ডানাকাটা পরী উড়ে আকাশে বাতাসে কারনে অকারনে জ্বর হবে পৃথিবীর জ্বর হবে নিশ্চিত ভেসে যাবে ডানবাম বৃক্ষ পাবে যমুনার চর সবুজ হবে কালাচাঁন
কবিতা
যে তুমি রোদের তলে
আমি তোমারে মনে মনে ডাকি তোমার মন বলে কিছু আছে নাকি যে কাল গ্যাছে নদীর জলে যে তুমি এখন রোদের তলে যে ফুল হাসে সূর্যের তালে— তাদের সাথে চকিত হৃদয়ের কানাকানি হয় নাকি আমার আকাশে প্রতিদিন একটি পাখি আসে, একটি ঘর আসে, একটি পালতোলা নৌকা আসে, যৌবনা কামনার বর্ষা আসে, পিকনিকমাখা নদীর তীর আসে সাথে আসে উদাম এক বাউল চর… আমি আঁকতে থাকি কেবল তোমার ঘর, তোমার সাইকেল, তোমার পাঠানো ফেইসবুক ইনবক্স এমন করে দিন চলে যাবে, চোখে নেমে আসবে বুড়ো অন্ধকার, রাতকে তখন রাত মনে হবে না, জল ভাঁটফুল থাকবেনা শরীরে শরীরে, সূর্যের আলো আরও ধূসর, পরিপূর্ন চাঁদ আয়মামা সুখ হবে ডিমলাইট আলো ঘরে আমার সিসিফাস মন তখনো একটু একটু করে টেনে আনবে তোমায় প্রিয়তম সম্পর্কে, কসম জান ভাসবে ভালো আগের মতো করে
হাত বাড়িয়ে দিলে আসবে?
হাত বাড়িয়ে দিলে আসবে? চলে যাবো কোনো এক দিগন্তে পাখিদের ঘর হবে ফুলদের সংসার তো থাকবেই ঘুঘু প্রিয়া বাঁধবে বাসা সুন্দর করে তুমি হাসো সুন্দর করে হাঁটো ঝগড়াটা করো বেশ— বিএসএফ বিজিপি বিজিবি বিএসএফ আমাদের ঘরে বাতাস বর্ষাপাতার মতো উড়বে তোমার লাভলক বাঁশির সুরে পথ হারাবে পথ পাবে আমারই পথে কাঁঠাল পাতায় জমবে নরম রঙের অভিমান লাজুক প্রিয়া জলকেলি বন্য সুখ আদিম গতর আঁচলে জমা করবে বৈশাখী মিছিল সারাটা বছর বেহুলার উঠোনে বারোমাস বেঁচে ওঠবে লখিন্দর ভালো কথা হলো ভালো কথার দরকার হয় না সেখানে সব নৌকা মাঝি চায়, কলম তো নাম কালির সাথে তুমিআমি বেঁচে যায় মুঠো মুঠো প্রেমে নেমে আসে যতসব অন্ধকারের মতো লাজুক ব্যথা রোপিত হবো তোমার ভেতর এই তো কথা রাধাদেহ আসওয়াদ আমার তাই গ্যাপহীন চুম্বন প্রার্থনা চুম্বনে চুম্বনে ঝরে যায় দেহাতীত ছায়া ঝরে যায় যাবৎ সব ভ্রমপ্রায় কালিমা নিহত বিয়ে আর থাকে না আর রবে না কামনায় কামনায় পুরাতন বছর চলো
একটি ফুলের দুটি কথা
পাখির একটা গল্প ছিল শুনেনি কোনো নৌকা পাতার একটা কথা ছিল শুনেনি কোনো বাতাস আমাদের ঘর ভরে যায় গন্ধরাজ আমাদের ঘর পেয়ে যায় হাসনাহেনা একটি ফুলের দুটি কথা জীবন দিয়ে আঁটা জোছনা রাতে বৃষ্টিমাখা আকাশগঙ্গা ঢাকা কলকাতা কলকাতা কলকাতা শুনেনি কোনো কথা শুনেনি আমার কথা নদীর একটা গল্প ছিল শুনেনি রাতের চাঁদ পাহাড়ের একটা কথা ছিল শুনেনি সোনালি রাত আমাদের ঘরে থেকে যায় নীরবতা আমাদের ঘরে নামে উদাস পাতা
জীবনকে মেঘনা নদীর জেলেও মনে হয়
জীবনকে কখনো কখনো ডমেস্টিক ট্রেন মনে হয়। চলছি তো চলছি। তবে চালানো হচ্ছে। স্টেশনে স্টেশনে নোঙর রাখি। মানুষ দেখি, পাখি দেখি, দেখি ক্লান্ত মেয়ের ঘুম। যে মেয়েটি সারা রাত দেহ বিক্রি করে ঘুমের ভারে ভারাক্রান্ত। তারপর অভিজ্ঞতাগুলো বগিতে তুলে যাত্রা শুরু করি অন্য কোনো স্টেশনের উদ্দেশ্য। মাঝে মাঝে জীবনকে মেঘনা নদীর জেলেও মনে হয়। সারাদিন জেলে ঘুমায়। রাতকে দিন বানায়, মাছ শিকার করে। লাইটার সার্চ খেয়ে শক্তি জমা করে শক্তিঘরে। কারণ সে-ই তো জেলের রাতের সূর্য। সকালে ব্যাগভর্তি মাছ। জীবনের মাছ। মাছ দেখে বউটার তার আকাশের মতো হাসি দেয়। যে হাসিকে পুঁজি করে জেলে প্রতিটি দিন ঘুমে ঘুমে কাটিয়ে দেয়। এইভাবেই ভাবনার চলাফেরায় জীবনে দাড়ি আসতে পারতো। কিন্তু আসলো না। ভাবনাগুলো পৃথিবীতে বেচেঁ থাকার ইচ্ছা পোষন করে। আমিও কেন যেন তাদের সাথে
শিলার মতো কিছু একটা পড়ছিল
শিলার মতো কিছু একটা পড়ছিল যখন একমুষ্টি বৃষ্টি আমি চেয়েছিলাম উল্টো কথা শুনিয়ে আমায় ঘুম পাতালে পাতালে আমি বৃষ্টির জন্য কেঁদেছিলাম সব আকাশের নীল রঙ নেই নীল ঘুড়ি আকাশে উড়ে তবু উড়ে একমুঠো বৃষ্টি আমি চেয়েছিলাম তুমি সাগর দেখিয়ে শান্ত হলে আমি নদী পেলেই খুশি ছিলাম ঘরের ভেতর ঝরনা একটা দরকার ছিল বিদায় ঘন্টা শুনিয়ে দিলে শান্ত সুরে খুব অজানা আদিম বাড়ির অলস পুরে এক পশলা বৃষ্টি আমি চেয়েছিলাম তুফান এলে চোখের পাতায় ভর দুপুরে বাঁশপাতার সবুজ আমায় স্বপ্ন দেখায় হলুদ খামের তোমার কথা মনে করে এক পৃথিবী বৃষ্টি আমি চেয়েছিলাম
মানুষ আসে না, আসে বয়স
পৃথিবীতে মানুষ আসে না, আসে মানুষের বয়স। বয়স কথা বলে, বয়স খেলাধূলা করে, বয়স চাকরি করে, বয়স বিয়ে করে, বয়স হিজরতে যায়, বয়স বিপ্লব করে, বয়স বাবা হয়, বয়স ঠাকুরমা হয়, বয়স দাদা হয়, বয়স প্রেম করে, বয়স কথা দিয়ে কথা রাখে না, বয়স বৃন্দাবনে যায়, বয়স রাধা হয়, বয়স রাজা হয়, বয়স কান্না করে, বয়স মারা যায়। পৃথিবীতে মানুষ আসে না, আসে বয়স
আমি এক এমরানুর রেজাকে চিনি
আমি এক এমরানুর রেজাকে চিনি যার বাড়ি মেঘনা নদীর তীরে। সে কত কিছু করে, সব কিছুই ডেমো। তার ডেমোকে ট্রেন মনে কইরা অনেকে ওঠে বসে। সময় ফুরিয়ে যায়, মাগার ট্রেন তো চলে না। একসঙ্গে যাত্রী সকল গালি দিয়া নাইম্মা পড়ে এক সময়। এমরানুর রেজা তখন মাথায় গামছা বেঁধে মেঘনা নদীতে নৌকা চালাইতে যায়, গুদারা ঘাট থেইক্কা ডাক আহে— এই মাঝি নিয়া যাও, নিয়া যাও। নারী কণ্ঠের ডাক। এমরানুর রেজা তখন হালুবালু কইরা গুদারা ঘাটের দিকে যায়। নারী নৌকায় ওঠে— হিলহিল কইরা হাসতে থাকে মাঝির বইটা। বইটা চালাইতে চালাইতে মাঝি ক্লান্ত হয়ে যায়, দূরে কিনারা দেখা যায়, কিনারার লাগাল পাইনা মাঝি। নদীর মাইদদে নৌকা থেমে যায়। আতকা আচানক এক বাতাস আহে, ঘূর্ণি বাতাস— এমরানুর রেজা, তার নৌকা আর সেই নারী কোথায় যেন হারিয়ে
মানুষ এক আধ্যাত্মিক পাহাড়
পাহাড়ে এক ধরনের মুখস্থ সৌন্দর্য থাকে। নদীতে থাকে এক ধরনের আধ্যাত্মিক আনন্দ। পাহাড় কিংবা নদী কোথাও আমি এমন আনন্দ পাই না যেমন আনন্দ পাই মানুষের সাথে আড্ডা দিয়ে। মানুষ এক আধ্যাত্মিক পাহাড়, আধ্যাত্মিক নদী, আধ্যাত্মিক আকাশ। অন্ধকারের পেছনে আলো থাকে, ঠিক আলোর পেছনে থাকে লোকটি। লোকটির নাম নাকি মানুষ। লোকটির নাম আসলে মানুষ নয়, লোকটির নাম আলো এবং অন্ধকার কিংবা তারচেয়েও অধিক কিছু। এক সময় আমরা এক ঘরে ছিলাম। একই মায়ের হাতের রান্না খেয়ে পড়ার টেবিলে বসতাম। সেই পড়ার টেবিল একই জায়গায় আছে, মায়ের হাতের রান্না একই আছে, আমরা আর আমাদের জায়গায় নেই, ছড়িয়ে গেলাম মাইল টু মাইল— পড়ার টেবিল সম্পর্কের চেয়েও শক্তিশালী।
তোমার লেখা থামাও
লেখক! তোমার লেখা থামাও। লেখাতেই তুমি পরাধীন। লেখার কারণে তোমার প্রিয় অপ্রিয় হয়ে যাবে। লেখার কারণে চাকরিটা তোমার অকালেই হারাবে। বাইরে যত আগুন আছে হৃদয়ে খেলা করবে, দহন তোমার সুজন হবে, সুজন দৌড়ে পালাবে। যে গরুটা গোয়াল চিনে না, সেও তোমাকে জানবে, ঘাসজ্ঞানে তোমার তোমাকে পাতাল-নরকে নামাবে। লেখক তোমার লেখা থামাও! নইলে বাঁচার আগেই মরবে। পাঁচ বছরের শিশুটা তোমার ‘বাবা বলে’ কাঁদবে। ভুলে যাও তুমি, এখনি ভুলে যাও পুরাতন যত শ্লোকের হাপর— সংসার বিষবৃক্ষশ্চ দ্বে এব রসময় ফলে কাব্যামৃত রসাস্বাদনং সঙ্গম সুজনৈসহ তেলের একটি দোকান খুলে দোকানী হও বাজার মানে কন্যা-পুত্র সংসার নিয়ে দিন কেটে যাক সুরেলা গানে