প্রিন্সেপ ঘাটের মাঝি কাহা যখন উচ্ছ্বাল হাসি দিয়া মাতিয়ে রাহে অন্ধকারমাখা জলের মুখ, হুগলি নদী তখন আনন্দে আটখানা, বিদ্যাসাগর সেতু তার খুলে দেয় আনত দুটি চোখ— তখন তুমি জলের মতো খুঁজে পাও অনুকরনপ্রিয় সুখ— নৌকো এক এক করে নদীর ভেতর যায়, নদী যায় জলের ভেতর— নন্দিনী কী জানে তাহার দায় কোথায়— মিমির মতো ষোলো আনা তোমার চাই-ই চাই— বৈঠার ছলাৎছলাৎ— কালো চুলের উদাস মাঠে বয়ে চলে বাতাসের অন্তিম নাগর— ও নাগর, বাতাসকে রেখে তুমি কোথায় যাও— প্রিন্সেপ ঘাটও মেঘনা নদীর লাহান পৃথিবীর মায়ায় পড়েছে— করে চলেছে তারা চাতক অনশন— একবার দেখা হবে মেঘনা আর প্রিন্সেপ ঘাটের খুব ভোরে— রাত ততদিনই তাহে যতদিন সূর্য তাহে অভিমানের ঘরে
কবিতা
দৃশ্যপট পাল্টায়
সব কিছু বদলে যায়— দৃশ্যপট পাল্টায়— সবুজ পাতা হলুদ শাড়ি পড়ে— অলস বেড়াল সময়ের হিসাবরক্ষক— কৃষ্ণচূড়া লালে লাল সবুজ পাতায়— অম্বরের নিচে বিশাল আকাশ— সব কিছু লালে লাল— অনেক কিছু বদলায়— শোকের চিহ্ন জমা থাকে হৃদয়ের কোনায়— হৃদয় এক অনাবাদি জমি চাষে চাষে বদলায়— অনেক কিছু গতি হারায়— সব কিছু বদলায়— হৃদয়ের রানী প্রজার মতো বেতনধারী আনন্দ চায়— নিজের মতো করে যুক্তি সাজায়— মরুময় মাঠে জলের প্লাবন বন্যার মতো দেখায়— দেখানো কাকা বাবু অদেখা ডাকাত— তারা বদলে যায়— সত্যকে বদলের মতো দেখায়
আমিও বাংলাদেশকে চিনি
বাংলাদেশও মানুষ অনেকের পরিচিত একজন মানুষ তার কন্ঠে তারাপদ সুর ভাষায় আলপিন সুখ বৈষ্ণব বাউল প্রেম গায়, ইছামতি পরে বেগুনী রঙের ব্লাউজ চম্পা কালারের শাড়ি, বাম হাতে হৃদয় ডান হাতে নুড়ি আমিও বাংলাদেশকে চিনি ফুটপাতের পাশ দিয়ে পা মেপে হেঁটে যায়, একপলক চোখ রাখে সামনে, এক পলক মাটির কাছে নখ থেকে সামান্য দূরে, একপলক চোখ রাখে মনের ভেতর আমি তাকে দূরতমা বলি কাছে তবুও দূরে আমি তাকে প্রিয়তমা বলি দূরে তবুও কাছে বাংলাদেশ নামে লোকটির মাংসের মতো হৃদয় আছে প্রতিদিন চা খেতে বসে, হাঁটে, হাসে বিকাল বেলা জিমে যায়, রুটির সাথে ডিম খায়, আস্ত দুপুর মদির দোকানে কাটায় তার সাথে দেখা হয় আমার শাকুরায় মদ খেয়ে মাতাল প্রায় চিৎকার করে কাঁদে, দেখা হয় মাজারে জিকির করে আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, দেখা হয় সুপ্রিম কোর্টের বারান্দায় প্লেকার্ড হাতে ন্যায় বিচারের দাবির সাথে, দেখা হয় মেঘনায়
জলের ভেতর সাগরবাস
নদী ছিলাম ছোট হাওর কিংবা ডোবা নয় সাগরই ছিলাম সাগরিকা অভিজ্ঞতার ঝকমকে রস যদি জ্ঞান হয় জ্ঞানী নয়, জ্ঞান জন্ম হচ্ছে সবুজে শ্যামলে জীবন যখন টাইগ্রিস-ইউফ্রেটাস যূপকাষ্ঠে পূর্ণ ঝরনাকন্যা স্বজাতি ত্যাগ করে নীলসাধু জলে তখন তুমি গানিতিক মানুষ জলের পাড়ে আমাকে হিসাব কর ত্রিকোণমিতিক এ্যাঙ্গলে পাই -থিটার মানে মাপো আমার মানসিক বাহু আমিও হয়ে গেলাম গানিতিক ফর্মুলা এখন তোমার চোখে জীবন নেই আমি আছি নদী নয়, সাগরই ছিলাম জলের সাথে কথা বলে জলে গেলাম ছায়ার সাথে হেটেমেটে কায়া পেলাম জোছনা রাতের আকাশ তবু আকাশ পেলাম ফুলরঙ্গ গন্ধে চলে বাগান সুবাস চলছি রোজ জলের ভেতর সাগরবাস
সুন্দর প্রেমের নাম ঝগড়া
বিশ্বাসের ঘরে শুন্যতা
বিশ্বাসের ঘরে শুন্যতা শুন্যতা গোয়ালে, শুন্যতা নদীর ভেতরে-বাহিরে শুন্যতা ইমাম সাহেবের আসমানী ওয়াজে দেবদারু বৃক্ষের নিচের আসনটি শুন্য শুন্য প্রান্তিক রেলওয়ে স্টেশন বড় শুন্য শুন্য লাগে, বড় একা একা লাগে প্রদীপ মৃত হলে বিগলিত অন্ধকার অন্ধকারে জ্বলে জ্বলে অঙ্গার বড় একা একা লাগে, বুকের বাম পাশে কুয়াশার ধোঁয়া আগুনে পুড়ে ঠাণ্ডা হচ্ছে নাগরিক জীবন নগরের ঘুম ঝুলে থাকে বাসের ফুটপাতে শুন্যতা বিনয় ভবন থেকে অরশ্রী মার্কেট, অরশ্রী মার্কেট থেকে ফেয়ারলি স্ট্রেট শুন্যতা নাগরিক আশীর্বাদের ক্যানভাসে অসহায় শুন্যতা, বড় শুন্য শুন্য লাগে অসহায় শুন্যতা, অসহায় জীবন
স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো মানুষ
মাঝে মাঝে কবি হতে ইচ্ছে করে যে কবি কবিতা লেখে না, নাম তার কবি এমন কবি হতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে এসি রুমের চব্বিশ তলায় বসে মিনিটে মিনিটে কবিতা লিখতে। ইচ্ছে করে করোনার চেয়ে শক্তিশালী হতে। ইচ্ছে করে পৃথিবীর অর্ধেক মানুষ মেরে ফেলতে। সবার বেঁচে থাকার অধিকার নেই। সবার বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। মানুষ যারা ঘাম বিক্রি করে বেঁচে থাকে। মানুষ যারা হাত-পা বিক্রি করে বেঁচে থাকে। মানুষ যারা ঘাম বিক্রি করে বেঁচে থাকে তাদেরকে আমার দরকার। তাদেরকে আমি ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করাবো। তাদেরকে নামাতা শিখাবো। তুই একে তুই। তুই গুনে মানুষ। মানুষ নয় তারা। তারা গরীবের খাবার সংহার করে বেঁচে থাকে। হালারা গরীবের চেয়েও গরীব। যখন দেহি গরীবের মাংস বিক্রি করে আজ তারা ধনী, যখন দেহি গরীবের রক্তের উপর দিয়ে গড়ে তুলে বিলাসবহুল
স্মৃতির পাপিয়া
ডানপিট সময় রাবারের তার কাক বসে শরীরে তার বারবার পাখি বসে বসে স্মৃতির পাপিয়া চোখ অর্কিড বল গতিতে গতিতে সামনে চলে— ধরতে গেলে ভয় আরও নিকটে গভীর হলে আরও আরও ভয় প্রানে থরথর, দূরে থাকলেও মানবিক রোগ ধরে আপন করে— ভাল লাগে না কিচ্ছু ভালো লাগে না, অন্তরের সুর শুকিয়ে যায় বারবার কাছে গেলে ভয় ভয় দূরে থাকা নয় নয় সমাজ খাঁচা হয়ে হাসে— জলাতক প্রকৃতি তবে ক্যামনে বাঁচে ক্যামনে বাঁচে এতো বিপদ সংকেত থাকলে জাহাজ ক্যামনে যাবে সেন্টমার্টিন— ভাষা ক্যাফে কিংবা ইমাম মামার টিস্টলে বসে দিনাপাত করলে কিছু কথা জমে কানে— কাজ তো চাই কাজ— বিভূতি স্বপ্নেরা খেলা করে মনে— আরও আরও প্রান চাই আরও প্রান অনেক পাতার নাচ, অনেক নাচের ভাঁজ ঝরে পড়ে মধুমাস উঠোনে— যা করবে নোভা তা করতে পারে না, যা
অর্থগত শব্দের ভেতর
কোন মায়ায় ধরবে তুমি জীবন? আলো রেখার মতো অলাতচক্র বারবার জাল ফেলে থাকে উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম উপর নিচ আমাদের ঘর হওয়ার কথা আমাদের একটা ব্যক্তিগত নদী থাকার কথা আজ আমরা দূরাগত তারা পরিণীতা কাল আসবে তো? ভোরের আলোয় গ্রামের পথ ধরে হাঁটবে তো? কোকিলডাকা ভোর সকাল হয়ে আসা অপেক্ষা নির্জনতা ডাকে তোমায় দূরাপনা, তোমাকে অর্থগত শব্দের ভেতর খুঁজে পাই না, সরিষা ফুলের মতো হারিয়ে যাও মিশে যাও মিলিয়ে যাও শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে। এগিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী পৃথিবী ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে সাগরের দিকে পুরাতন বাড়িটা পুরাতন রয়ে গেল শ্যাওলা পড়েছে তার উপর মানুষ অসহায় হলে মেঘও আকাশহীনা দলছুট আদি মানবের ভুল এখনও মানুষ বয়ে বেড়ায় মেঘ আর বৃষ্টির দূরত্বে আমরা বৃষ্টি হলে চোখ চেয়ে থাকে কড়তাঘরে ঘুরপাক নিয়তি কোয়ারেন্টাইন সময় বজ্রপাত শিলাবৃষ্টি মানুষের মৃত্যু আমরা এখনো দূরের তারাদের দেশে গন্ধরাজ বেলীফুল কাঁঠালপাতা ডালিয়া আকাশ পরিষ্কার হলে বর্ণহীন গন্ধহীন ভালোলাগা মেঘের আশায় বসে থাকে মুর্শিদমন পৃথিবীর উপরে ছায়াবাজ পুতুল মানুষের উপরে
অনেক মিলিত শোক
এরা কী মানুষ হাত কান নখের মতো সূর্য দেখা যায় কারা এরা যারা জোয়ারে জোয়ারে নেমে আসে অভিনয় করে পানসে নদীর তীরে কুয়াশায় কতিপয় আজাইরা বকবক কুয়াশায় কতিপয় হেমলক কুয়াশায় কতিপয় মুখ শান্ত হবার কিছু নেই, ছিল আছে থাকবে এমন জাতীয় আশা লাইটের পেছন থেকে দেখানোর অভ্যাস ওফেলিয়ার মৃত্যু সহজে মানুষকে বিশ্বাস করে, আড়ালে গেলে ঠিক শব্দটি অনেকটা বেঠিক মাঝির শেষ ঠিকানা ফ্রি টিকিটে পাওয়া যেতে পারে, একেবারে ঠিক দুজন হলে, তিনজনের ভেতরে ঘোলাটে হৃদয় কারা তারা জলের গায়ে হেঁটে চলে আলোকিত হত্যার ভোরে অনেক মিলিত শোক একজনের এক মুহূর্তের বৃষ্টির সমান নহে, বর্শার মাথায় শীত নামে কালে কালে— মাটির কাছে মাটি গেলে মানুষ শব্দটি কোথায় থাকে, কোথায় থাকে— এরা কী মানুষ তবে নখের মতো যাদের হৃদয় মুখ কথা আলো শেষ হলে চোখ অপেক্ষা করে নীরবতার, দ্বীপের সবপাশে এখন গভীর অন্ধকার