আজও মনে পড়ে তাকে। আজও মনে পড়ে তার সেই হাসি। আজও মনে পড়ে তার সেই চোখ। বাংলা বিভাগে ভর্তির যাবতীয় কাজ শেষ করলাম। এখন আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মনে আনন্দ আর আনন্দ। কলাভবনের দ্বিতীয় তলায় আমাদের বাংলা বিভাগ। রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ এই কড়িডোর দিয়ে হাঁটাহাঁটি করতেন, আমি এখন এই কড়িডোর দিয়ে পায়চারী করে রোদেলা সময় যাপন করবো। এতো আনন্দ আমি কোথায় রাখি! আনন্দ মনে গানে গানে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামি। ডিন অফিসের সামনের দরজায় বের হয়ে যাবো। দেখি ডিন অফিসের সামনে কস্টিউম করা সুন্দরী মেয়েরা ম ম পন পন বো বো করছে। এক সুন্দরী মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম ‘এখানে কী?’ মেয়েটি হাসিমাখা চোখে উত্তর দেয়— নাট্যকলা ও সঙ্গীতের ভাইভা হচ্ছে। ও তাই। জ্বী তাই। তারপর মেয়েটি আমার সম্পর্কে জানতে চায়লো। আমি আপনি আপনি আমার আনন্দের নিউজটা প্রকাশ করার
Author: emranor reja
শান্তি হচ্ছে গুম
অবিশ্বাসের চাষ
ভয়ঙ্কর এক রোদ মাথায় নিয়ে আমরা নদী পার হলাম। পৃথিবীতে তখন জঙ্গল বলে কোনো প্রানি নেই। সবই বালু আর বালু। আই মিন মরুভূমি। হাতে প্রচুর বিদেশি টাকা জমা হওয়ার কারনে ব্যাংকের লকার ভরে গ্যাছে বালুতে। আই মিন মরুভূমিতে। তাই যেখানেই আমরা পা রাখি সেখানেই বালু আর বালু। আই মিন মরুভূমি। মরুভূমি মানে জলের অবিশ্বাস। মরুভূমি মানে অক্সিজেনের অবিশ্বাস। দেশে এখন বালুর পাশাপাশি অবিশ্বাস চাষ হচ্ছে। একটা কুকুরকে নিজের মুখের খাবার দিতে গিয়ে নিজেই হকচকিয়ে গেলাম। কারন কুকুর আমাকে ভয় পেয়ে দশ হাত দূর দিয়ে চলে গেছে। এটা কুকুরের অপরাধ নয়— কুকুরের পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব। অপরাধ আর নৈতিকতা এক কথা না। নৈতিকতার কারনে অনেক দোকানকে আমরা প্রতিষ্ঠান বলি। নদী পার হতে হতে আমরা ভাবছি দেশে আর কৃষি জমি থাকবে না। কৃষক আর কৃষক থাকতে
বিছঐন মানে পাখা
বইল। আমের মকুলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অঞ্চলের মানুষ বইল বলে। মুকুল> বুকুল> বইল অথবা বউল> বইল। ফাজুন মানে লাঠি। গরুকে দিয়ে হালচাষ করার জন্যে একধরনের লাঠির দরকার হতো— সেই বিশেষ ধরনের ছোট মাঝারি শক্তিশালী লাঠিকে ফাজুন বলে। এই লাঠিটা সাধারণত বরাক বাশ দিয়ে তৈরি করা হতো। হালের বলদ দিয়ে মাঠে হাল বাওয়া হতো ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত— কোন কোন সময় হালের বলদ দুর্বল হয়ে শুয়ে পড়তো— আইল্লা পাজুন দিয়ে পিটানো হতো এক্টিভেট হওয়ার জন্য— তাতেও যদি বলদ সক্রিয় না হতো, তাহলে বলদের লেজের মাথায় সুঁই ঢুকানো হতো— কোনো কোনো সময় ম্যাচ জ্বালিয়ে সেকা দেওয়া হতো লেজের আগায়— সেকা খেয়ে বলদ লাফ দিয়ে উঠে পড়তো! বিছঐন মানে পাখা— চমৎকার হাতের কারুকাজ সংবলিত পাখা। যখন বিদ্যুৎ ছিল না তখন কৃষি প্রধান বাংলার মানুষের শরীরে বাতাস করার প্রধান
প্রাচীন নীরবতা
এক প্রাচীন নীরবতা জানালা দিয়ে বাতাসের মতো তানহা তানহা ডাক তুলে অন্ধকারে আসন রেখেছে। বিতনু প্রিয়ার মুখ মনের ঘরে শব্দ করে ডাকে। আকাশ নেই আজ— নেই আকাশের ছাদ। কম্পিউটার খুলে বসে আছে রেজা। মনিটর থেকে ভেসে আসছে হাসির বাথান— দেবী মনসা ছদ্মবেশাসন। রেজা কেনো হাসে— তাও মাঝরাতে!? তার চোখে কেনো লাল রঙের বাতিঘর-সুখ!? সকাল ঘুমাতে যাবে— রাত জেগে উঠবে— একটা চাঁদ একাই জীবনভর— ব্যাজোক্তি কালে মানুষের মৃত্যু অনিবার্য— মৃত্যু যেনো মৃত্যু নয় ঠিক যেনো শীতের চাদর— উষ্ণ আরাম শরীরের জীবন। গাছের পাতা অটো নৃত্য করে। মাঝরাতে। বাতাসের সাথে। অতিথি অতীত সুদূরমগ্ন বিষন্ন বিকাল পাখি হয়ে বর্তমানের মাঠে রাখালি বিতান কন্যা। এই মিষ্টি বাতাস এই মিষ্টি আলো-চাঁদ-খেলা গোল গোল শব্দের স্বপ্নমায়া ছায়া মাল্টিপ্লাগে জমে থাকা সতর্ক লাল চোখ— ডাকে অবিরাম প্রতিদিন প্রতিনিয়ত প্রতিক্ষেত্রে প্রতিক্ষণ— এই মাঝরাতে ট্রেনের শব্দ কানের কাছে
কাজল রবি দাস ও রিক্সাওয়ালা
ক. কাজল রবি দাসের দোকানে গিয়ে চামড়া জুতা দেয়ার জন্যে বললাম। তিনি জেনুইন চামড়ার জুতা দিলো। সোল ব্যতীত জুতাটির আপাদমস্তক চামড়ার। দাদা কিসের চামড়ার এই জুতাটি? গরুর। গরু না আপনাদের দেবতা? এই সব কতা ইণ্ডিয়া গিয়া কন, ইডা বাংলাদেশ। চামড়ার জুতা পড়লে নাকি মাথা ঠান্ডা থাকে। দেবতার চামড়া থেকে যে জুতা নির্মান হলো সেই জুতা পায়ের নিচে পড়ে কেমনে মাথা ঠান্ডা রাখবো!? খ. রিক্সাওয়ালাকে বললাম আমাকে আজিমপুর কলোনিতে দিয়ে আসতে। টিএসসি থেকে আজিমপুর কলোনি। মামা ভাড়া কত? ৩০ টেহা দিলেও নিতে ফারমো, ৭০ টেহা দিয়াও নিতে ফারমো, আবার ২০ টেহা দিয়াও নিতে ফারমো। রিক্সাচালকের দরদাম শুনে আমি তো অবাক। আমি ৩০ টেহা দিয়া রাজি হইলাম। আল্লা গো! ইডা রিক্সা চলতাছে না, চলতাছে বিমান। মামা আস্তে চালান। মামা বেশি কতা কইয়েন না— যেমন ভাড়া তেমন চলন। রিক্সা থেকে নেমে আমি মোটামুটিভাবে আসমানের
মানুষের জন্মদিন কবে মা?
ঢেউয়ের তালে যে পা ছুটে আসবার কথা সে পা ছুটে গেছে সাগরের পরপারে এক উদাস দুপুর পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে নদী ও হাঁসের খেলা দেখে পুঁটি মাছের মিছিল শ্যাওলার কোলাহল চোখে এক বিভ্রম স্মৃতি স্মৃতির জাদুঘর সময়ের মহাজন অস্ত্র দিবে— খাদ্য দিবে না ক্ষুধার্ত আবেদন জাগ্রত করে রাগের নিউক্লিয়াস মেমব্রেন চোখে গত শতাব্দীর লিটলবয় ফ্যাটম্যানরাগ মানুষের জন্মদিন কবে মা তোমার ছেলে পশুদের কার্নিবাল দেখে উজ্জীবিত হয়েছে ঢেউয়ের এ্যারিনায় মানুষের মৃত্যু তারিখ লিখবে হার্ডলাইনে বাজবে ভরতের গীতবিতান কয়েক প্যাক ইথানলে সজ্জিত হবে মনের বাগান মানুষের জন্মতারিখ আছে কী মা মানুষের ধর্মতলায় মানুষ তো পশুর শিরোনাম পড়ে প্রাণির মৃত্যু হলে হয়তো মানুষ পেতো মৃত্যুর ইতিহাস ইতিহাস নয়— ভুলের সংগ্রাম
বিক্রি, ব্যবসা, বিনিয়োগ
নগদে পন্য বিক্রি করা হলো পাঁচ হাজার টাকা এবং এর জন্য ভ্যাট ধার্য করা হলো পঞ্চাশ টাকা। নগদান হিসাব ডেবিট বিক্রয় হিসাব ক্রেডিট ভ্যাট হিসাব ক্রেডিট ভ্যাট হিসাবটি এখানে দায়। হিসাববিজ্ঞানের ভাষায় দায় বৃদ্ধি ক্রেডিট। যেহেতু প্রতিষ্ঠানের দায় বৃদ্ধি পেয়েছে তাই ভ্যাট হিসাবটি ক্রেডিট দেখানো হয়েছে। হিসাববিজ্ঞানের এই সহজ হিসাবটিও জটিল করে বাংলাদেশের হিসাব বিজ্ঞানীরা। খুব গোপনে ভ্যাট হিসাবটি বিক্রয়ের সাথে এ্যাড করে ক্রেডিট দেখায় যার ফলে দায়টিও প্রতিষ্ঠানের আয় হিসাবে পরিগণিত হয়ে যায়। আবার যিনি হিসাব বই অডিট করার জন্য আসেন তিনিও সন্তুষ্ট থাকেন যদি এমন এনকাউন্টার এন্ট্রি পাওয়া যায়। কারণ তাতেই তিনার পকেট ভারি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমন আরো অনেক সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। এখানে টাকা উপার্জনের জন্য ব্যবসা করতে হয় না সব সময়। এতিমখানার নামেও ব্যবসা করা যায়। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান কিন্তু লাভেমূলে গাদাগাদা। প্রত্যেক পীরে কামেলের
ভয়ে মরতে চাই না
ভূমিকম্পে পুরো বিল্ডিং কেঁপে ওঠল, আমি খাচ্ছিলাম, খেতে থাকলাম, হাউমাউ কান্না পুরো বিল্ডিং ছড়িয়ে গেল। আমি তখনো খেতে থাকলাম। ভূমিকম্প থেমে গেলো। আমি তখনো খেতে থাকলাম। পুঁটিমাছ ভাজি আর ভাত। বিল্ডিং ভাঙেনি। তাদের ভয় পাওয়া আর কান্নাকাটি লজ প্রজেক্টে লেখা হলো। মরে যাবো একদিন নিশ্চিত কিন্তু ভয়ে ভয়ে মরতে চাই না। ভয় মৃত্যুর ঔষধ নয় বরং ভয় মৃত্যুর এসিস্টেন্ট। মরে যাবো একদিন নিশ্চিত কিন্তু ভয়ে ভয়ে মরতে চাই না। মরে গেলে আমার জন্য কেউ দোয়া করবেন না, দোয়া করবেন তাদের জন্য যাদের পাশে আমি দাঁড়াতে চেয়েছিলাম।