You are here
Home > কবিতা >

অব্যয়

রেললাইন। হাজার বছরের পুরাতন রেললাইন। রেললাইনের পাশে মসজিদ। এখনো নির্মাণাধীন। একজন পাহারাদার, মুখে তার সর্বহারা সিগারেট। মসজিদের রড-সিমেন্ট যেন চুরি না হয় সেজন্য সারারাত তার ডিউটি।

এই রেললাইনে কুকুর নিজের উপস্থিতি জানান দেয় প্রিয় কোনো শক্তিশালী ভঙ্গিমায়। রেললাইনের রেড এলার্ট কখন থেকে জারি করা তা রেললাইন জানে না, তাকে জানতে দেয়া হয়নি। একজন মাতাল পথ ভুলে রেললাইন ব্যবহার করছে বাড়ি ফেরার তাগাদায়। একটি চাঁদ ঝুলে আছে রেললাইনের ঠিক মাথা বরাবর। কৃত্রিম লাইট দূর অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, দূর অন্ধকার থেকে ভেসে আসছে ঝিঁঝিঁপোকার আনন্দ ধ্বনি। দুটি আকাশচুম্বী বোকা গাছ লম্বা হতে হতে ছোট হওয়ার শিল্প ভুলে গেছে।

রাত কিন্তু এখন মধ্য বয়সী— যৌবন এবং বৃদ্ধের হাতছানি। এই রাত বলে না কোনো কিছু আসবে,বলে না কোনো কিছু যাবে। কেবলই স্বপ্ন দেখায়। এখন রাতেরও স্বপ্ন দেখার বয়স। রাতের এমন আনচান করা বয়সে অব্যয় বড়শি পেতেছে জোছনার সাগরে।

অব্যয় উদভ্রান্ত পথিক। অব্যয় প্রেমিক। অব্যয় ভাবছে সাতাশ ফেব্রুয়ারির কথা। অব্যয় এখন বীরপুর গ্রামে। সে তখনকার কথা ভাবছে। তখন বলতে ঠিক এক বছর আগের কথা।

এক বছর আগে অব্যয় শকুন্তলার সাথে ছিল। শান্তিনিকেতনে। তাদের প্রথম ডেটিং বৌদির দোকানে। বৌদি চা দিলেন। হাত কাপছে। অব্যয়ের হাত, যে হাতের উপর ভর দিয়ে পৃথিবী টিকে আছে সেই হাত।

আজ কিন্তু বৌদির দোকান নেই।

রাস্তা বড় হয়েছে। রাস্তা বড় হলে ছোট দোকান আরও ছোট হয়ে যায়, কখনো ছোট হতে হতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে। বৌদির দোকান অস্তিত্বহীন। দোকানে যারা আড্ডা দিতো তারা এখন প্রত্যেকে নাগরিক লাইট কিংবা এই পুরাতন রেললাইনের রেড এলার্ট।

দূরে অন্ধকারের মতো গোল আলো দেখা যায়। লোকে হয়তো তাকে প্লাটফর্ম নামে চিনে। অব্যয় প্লাটফর্মকে ট্রান্সফরমার বলে। সময়, কাল, পাত্রের ট্রান্সফরমার।

শকুন্তলাকে বিষ্ণু মানুষ নামে চিনে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক মানুষ। মানুষ তাকে চিনে অন্য কোনো নামে। অব্যয়ের কাছে শকুন্তলা দূর অন্ধকারের মতো আলো দেখানো প্লাটফর্ম। কখনো যদি অব্যয় এই শহর ছেড়ে চলে যায় দূর কোনো অজানায় তখন এই শকুন্তলাপ্লাটফর্ম তার একমাত্র ভরসা।

অব্যয়ের সামনে এখন দুটি পথ, হয় রেললাইন দিয়ে হাঁটবে তো হাঁটবে নয় রাস্তাকে বাড়ি ফেরার সিরাত মনে করে চলবে গাড়ি ঠক্কর ঠক্কর। গাড়ি শব্দের সাথে চলন শব্দটি খুব প্রাসঙ্গিক। অর্থাৎ গাড়ি মানে চলনশীল প্রাণি। গতি তার প্রাণ।

কিন্তু দেহগাড়ি কতক্ষণ চলতে পারবে? সকাল থেকে জল ছাড়া আর কোনো ফুয়েল জমা নেই ইঞ্জিনে।

তারপরও অব্যয় হাঁটছে। তার চেষ্টা থেমে যেতে চায়। চেষ্টা একসময় দুর্বল হয়ে আসে। অব্যয় মাটিতে শুয়ে পড়ে। তার এক পা রেললাইনে, আরেক পা বাড়ি ফেরার পথে, একটি চোখ আটকে আছে চাঁদের ডকভরা জোছনায়, আরেকটি চোখ রেললাইনের রেড এলার্টের সেই নিয়ম নীতির বদ্ধঘরে

Leave a Reply

Top