
প্রত্যেক ইবাদত ভাই ভাই। প্রত্যেক ইবাদত জলের মতো যৌথকোষ। ইবাদত মানে নিজের প্রতি সচেতন থাকা। জলের কোনো অংশে ঢিল মারলে যেমন জলকোষে ঢেউ লাগে তেমনি কোনো ইবাদতে মনোনিবেশ করলে ইবাদতকোষে ঢেউ লাগে।
সালাতে সিয়াম, যাকাত, হজ্ব রয়েছে। সালাত বান্দার সাথে আল্লার সম্পর্ক নির্মাণ করে যা হজ্বের নামান্তর, সালাতে শরীরের যাকাত দেয়া হয়ে যায়, সালাত একপ্রকার সিয়াম কারন সরিষা পরিমান খাবারও সালাতরত অবস্থায় খাওয়া যায় না।
ইসলামে সালাত কেন?
সালাতের উদ্দেশ্য মানুষকে মানুষমুখী করা, উগ্রতা থেকে মানসিকতাকে হেফাজত করা। সালাতের মাধ্যমে আসমানের আল্লাহ মানুষের চিন্তায় নেমে আসে। দুনিয়ামুখী মানুষ আল্লাহমুখী হওয়ার বর্নময় প্রশিক্ষণ লাভ করে।
কুরানে আছে তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করেছি, তোমাদের আগেও ফরজ করা হয়েছিল যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।
আলোচ্য বিষয় যেন তাকওয়া অর্জন করতে পারো। মানে সিয়ামের উদ্দেশ্য তাকওয়া অর্জন।
তাকওয়া হল মানসিকতার স্তর। মানসিকতা মানুষমুখী হলে আইনের শাষনের প্রয়োজন নেই যেখানে প্রত্যেক মানুষ প্রত্যেক মানুষের কল্যানের চিন্তা করবে। আর ইবাদতের অর্থই হল মানসিক স্টেশন তৈরি করা, মানুষকে আরও আরও মানবিক করে তুলা— পাঞ্জাবি টুপি বোরখা ধর্ম না, ধর্ম এক বোধগত চর্চার নাম, মতবাদগত আচরনের নাম। আমাদের দেহের ভেতরে আরেকটি দেহ রয়েছে যে কেবল ভোগ করতে চায় অর্থাৎ ভোগে তার আনন্দ। দেহের ভেতরে যে দেহ আছে সেই দেহের ভেতরে আরও আরও দেহ আছে— যাদের কাজ একেবারে আলাদা। আলাদা কাজের সন্ধান পেতে গেলে নিজের ইচ্ছাকে আলাদা উপায়ে সাজাতে হয়— ভোগের আনন্দে নিজেকে ব্যস্ত না রেখে, ত্যাগের ভেতরে যে ভোগ আছে সেই আনন্দে নিজেকে ব্যস্ত করতে হবে।
আরবি ভাষায় যখন কোনো কিছুর ইচ্ছার সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক বোঝানো হয়, তখন “شاء” শব্দটি ব্যবহার করা হয়।”شاء”ক্রিয়াটি নিজের মধ্যে সম্পূর্ণ ইচ্ছা ও ক্ষমতার প্রকাশ বহন করে। কোনো মানুষ যখন বলছে ইনশাআল্লাহ (إن شاء الله) তখন তার নিজের ইচ্ছার আর মূল্য থাকে না। কারন إن (ইন্) শব্দটা شرطية جملة (shartiya jumlah, অর্থাৎ শর্তসূচক বাক্য)— ইংরেজিতে বলা হয় conditional particle! বৃষ্টি আসলে আমি বের হবো। বিষয়টা ক্লিয়ার বৃষ্টি না আসলে আমি বের হবো না। ‘আল্লাহ যদি চান বা ইচ্ছা করেন’ এই কথার মধ্যে দিয়ে বিষয়টি ক্লিয়ার যে বান্দার সামগ্রিক জীবন বা ক্রিয়া আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। একজন মুসলমান নিজেকে যখন সম্পূর্ণ উপায়ে আল্লাহর নিকট সপে দিয়েছে তখন তার ব্যক্তিগত কষ্ট বা আনন্দ থাকার কথা না। আনন্দ বা কষ্টের উপরের স্তরের নাম প্রশান্তি যাকে আরবিতে জান্নাত বলে। তাহলে জাহান্নামকে বাংলায় কি বলে? দ্বিধা— জাহান্নামের বাংলা দ্বিধা, ইংরেজিতে বললে কনফিউজড!
I can go there by the grace of almighty Allah। আপনি যখন আল্লাহকে Almighty বলবেন তখন I can ব্যবহার করতে পারবেন না। কারন can শব্দটি কেবল কর্তার নিজস্ব ক্ষমতা প্রকাশ করে। আপনি যখন by the grace শব্দগুচ্ছের ব্যবহার করবেন তখন আপনি CAN নামক মডেল ভার্বের ব্যবহার করতে পারবেন না। কারন CAN শব্দটি কেবল সাবজেক্টের (I) ক্ষমতা প্রকাশ করে। I can go there on my own/ I can get there myself / I can go there myself= Sounds like I am feeling independent about it! ঠিক তেমনি “شاء” ক্রিয়াটি কেবল আল্লাহর ক্ষমতা প্রকাশ করে, আপনার অল্প থেকে অল্প পরিমান ক্ষমতাও প্রকাশ করে না। তাই ইনশাআল্লাহ” (إن شاء الله) আরবি শব্দগুচ্ছটি একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতাকে প্রকাশ করে, কর্তা এখানে একমাত্র আল্লাহ— যে ব্যক্তি এই শব্দগুচ্ছটি ব্যবহার করছেন তিনি একেবারে নাথিং। ইনশাআল্লাহ” (إن شاء الله) শব্দগুচ্ছে যে ক্রিয়ার ব্যবহার করা হয়েছে আরবি ব্যাকরনে তাকে বলে فعل ماضٍ بمعنى المستقبل ( ফে’লু মাদিন বিমা’নাল মুস্তাকবাল) মানে ভবিষ্যত বোঝাতে ব্যবহৃত অতীতকালের ক্রিয়া। এটি কেন করা হয়? এটি করা হয় কোনো কাজের নিশ্চয়তা বোঝাতে— কোনো কাজের সুপ্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা বোঝাতে।
তাই “শাআ” (চাইলো) বলা হয়, যেন আল্লাহর ইচ্ছা অব্যর্থ এবং নিশ্চিত। তাই ইনশাআল্লাহ” (إن شاء الله) বাংলা অনুবাদ আল্লাভরসা বলা যাবে না। ধরেন— নদী পার হবেন। আপনি নৌকার উপর ভরসা করলেন। মাঝি কিন্তু আপনি নাও হতে পারেন। ইনশাআল্লাহ” (إن شاء الله) শব্দগুচ্ছের মানে নৌকাও আল্লাহ, মাঝিও আল্লাহ, আপনি কেবল বসে থাকবেন। তেমনি “ما” + “شاء” + “الله”( মা শা’আল্লাহ)— একটি সম্পূর্ণ বাক্য— এখানেও ব্যক্তির ইচ্ছার কোনো গুরুত্ব বহন করে না— আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন বা আল্লাহ যা চেয়েছেন তাই হয়েছে। তাই ইবাদত মানে হলো নিজের সীমানা আবিষ্কার করা এবং নিজের সীমানায় আল্লাহর প্রভাব উপলব্ধি করতে পারার এক মানসিক প্রক্রিয়া— যার জন্যে ব্যক্তির প্রয়োজন হয় তাসলিম (تسليم) – আত্মসমর্পণ: আত্মাকে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর হাতে সমর্পণ করা। মাহাব্বা (محبة) – ভালোবাসা:
আল্লাহর প্রতি নিখুঁত ভালোবাসার প্রকাশ। খশু‘ ও খুযু‘ (خشوع و خضوع) – নম্রতা ও বিনয়: অন্তরের গভীর থেকে আসা ভয়, শ্রদ্ধা ও বিনয়ের অনুভব। ইখলাস (إخلاص) – নিঃস্বার্থতা: একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করা— এমন মানসিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যখন একজন ব্যক্তি তার প্রভুর সাথে সম্পর্ক স্থাপন করবে তখন তার ব্যক্তিগত বিষয়াদি সাময়িক থাকবে না— সামগ্রিক হয়ে যাবে। মানুষের মানসিকতাকে সাময়িক থেকে সামগ্রিক দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে ইবাদতের আলোচনা আমাদের সামনে উপস্থাপিত হয়েছে—
প্রভাত আসে
আমার সকাল তোমার আলোয় শুরু হোক
রাত নামে
আমার ক্লান্তি তোমার করুণায় ঢেকে যাক
ইবাদত আমার আত্মার নিশ্বাস
কালোর ভেতর আলোর ছায়া
ছায়ার ভেতর মায়া হয়ে করছো তুমি বাস