আমি নদীপাড়ের ছেলে। পানসে নদী— মেঘনার সরাসরি সন্তান। মেঘনার মন খারাপ থাকলে যে খুব প্রথমে ফিল করতে পারে সে এই পানসে। মেঘনার আনন্দ যার মনে প্রথম জোয়ার তুলে সে এই পানসে নদী। বর্ষাকালে পানসে নদী আর মেঘনাকে আলাদা করা যায় না— তারা এক এবং একেবারে একাকার। নদী পাড়ের মানুষ বিসর্জনের অর্জন খুব করে উপভোগ করতে পারে— দেখতে জানে বৃষ্টি কত সুন্দর করে নদীর জল হয়ে যায়। আমার চোখের জল যখন তোমার মনে গিয়ে নদী হয়ে যাবে তখন তোমাকে আমার শৈশব যৌবনের বেদনা ও প্রার্থনার পানসে নদী— পানসে নদীটা তোমার নামে লিখে দেবো।
Year: 2023
কথোপকথন [ ৫ ]
অর্জুন— ব্যক্তি পাপ করতে না চাইলেও সে পাপকর্ম করতে বাধ্য হয় কি করে? কে তাকে দিয়ে পাপকর্ম করায়? কৃষ্ণ— ব্যক্তিকে পাপকর্ম করায় তার নিহিত স্বার্থ, তার মোহ। স্বার্থহীন কর্মে কোনো পাপ থাকেনা। স্বার্থহীন কর্ম সর্বদা সমাজ-কল্যানকারী হয়৷ অর্জুন— তাই? কৃষ্ণ— হুম। তবে কর্মে যখন স্বার্থমোহ জড়িয়ে যায়, তখন ব্যক্তিকে রাগ-দুঃখ, কষ্ট, হতাশা, জ্বালা, যন্ত্রণা মুহূর্তে মুহুর্তে কুরে-কুরে খায়৷ অর্জুন— তাহলে আপনি রাধার সাথে কোনো অন্যায় করেননি? কৃষ্ণ— পাল্লাগ্রাম বস্তুর ওজন করে। পাল্লাগ্রামকে ওজন করে কে? অর্জুন— কে? কৃষ্ণ— পাল্লাগ্রাম ওজন হয়েই আসে। অর্জুন— আচ্ছা, বুঝতে পারলাম। কথোপকথন [ ৪ ]
মহান নেতা
মহান নেতা। এক মহান নেতা দুপুরের খাবার খেতে বসে— ভাত আর দুটি ডিম। আর কোনো তরকারি রান্না হয়নি সেদিন— এমন সময় দুজন মেহমান আসে— তারাও ক্ষুধার্ত। মহান নেতা তাদের জন্যে দুটি বাসনে ভাত পরিবেশন করে। তরকারি তো নাই! মহান নেতা নিজের দুটি ডিম দুজনকে দিয়ে দেন— মহান নেতার থালায় কেবল সাদা ভাত— একজন মেহমান নিজের আস্ত ডিম থেকে অর্ধেকটা নেতাকে দেন, আরেকজন মেহমান দেন অর্ধেকটা ডিম। ফলে নেতার হয়ে যায় একটা ডিম, আর মেহমানরা খাবার শেষ করে অর্ধেকটা ডিম দিয়ে। ~প্রিয় নেতা ভাই, খাওয়ার লোভটা ছেড়ে দেন— খাওয়ানোর চিন্তা করুন— মৃত্যুর দিন পর্যন্ত জনগণ আপনাকে উপোস রাখবে না— জনগণ উপোস থাকলে আপনাকে না খেয়ে মরতে হবে
এই যে ফুল
এই যে ফুল ❀ বসে আছো পাতার তলে চোখ দুটি বন্ধ করে হাসো আবার উঠো নড়ে কার ভাবনাঝড়ে? ফেলে আসা দিন? নাকি আসন্ন সময় অসীম? ভালো লাগে দেখতে— ভাবো কিংবা কাদো হাসো কিংবা রাগো এই যে ফুল ❀ বসে একা পাতার ঘরে হলুদ জামা গতর জুড়ে চোখ দুটি বন্ধ করে তোমার মন কার বাতাসে নড়ে? মনসময়ে ডুবে যাওয়া আকাশ? নাকি চোখে লাগা খুব সকালে প্রথম প্রেমের বাতাস? ভালো লাগে দেখতে— নীরব কিংবা সরব কিংবা জলভাসা তোমার কলরব
চোখের জলে আকাশ ধরে
মানুষগুলো অন্য রকম আঁকাবাঁকা কথা বলে মানুষগুলো অন্য রকম সাপের মতো হেসে চলে মানুষগুলো অন্য রকম অন্ধকারকে আলো বলে মানুষগুলো অন্য রকম হিংসা থেকে নিন্দা করে মানুষগুলো অন্য রকম ছায়া দেখে মায়ায় পড়ে মানুষগুলো অন্য রকম আলেম আলেম মুখোশ পরে মানুষগুলো অন্য রকম প্রয়োজনের হিসাব করে মানুষগুলো অন্য রকম নারীদেহে মাংস খোঁজে মানুষগুলো অন্য রকম কুকুর-বেড়াল আওয়াজ তুলে মানুষগুলো অন্য রকম কেল্লা কেটে পুন্য করে মানুষগুলো ভিন্ন রকম চোখের জলে আকাশ ধরে মানুষগুলো অন্য রকম অন্য রকম নিজের ঘরে মানুষগুলো অন্য রকম অন্য রকম চোখের ভাঁজে, মনের ভেতর খুব গোপনে আকাশ-পাতাল অন্য রকম অন্য রকম চোখে চোখে আমি কেন একই রকম ঝরে পড়া পাতার মতন
হঠাৎ সন্ধ্যা হয়ে গেলে
প্রিয়তমা আমার সবুজবীথি নিশিযাপন ওগো আমাকে ফুলবাবু নয়— ফুটবল ভেবে হেড মেরে পৌছে দিতে চাও গোলপোস্টে দর্শকের হাততালি তোমাকে কনফিউজড করে পরাজিত হও তুমি কৃষ্ণচূড়ার ফুলপাতা ছলে আলো নয় বাতাস নয় আরও আরও মনোযোগ দরকার ফুটবল যতটা গোল ততটা গোল নয় আমি মানসিক সঞ্চয় বিকালের হলুদ আলো হঠাৎ সন্ধ্যা বিকালের হলুদ আলো থেকে হঠাৎ সন্ধ্যা হয়ে গেলে গোলকধাঁধা মেঘ ☁ বৃষ্টি ছেড়ে বাচে জোয়ারে যা আসে ভাটায় তা ভেসে যায় মাঠ ভিজে ভিজে গেলে মাঠ পরে থাকে মার্জিত ঘাস গোলপোস্ট ফুলপাতা শাড়ি লিপিবদ্ধ ঠোঁট বৃষ্টিজলে ভিজে গেলো আমায় নিয়ে ঘরে ফিরো ফুলবাবু নয়— ফুটবল ভেবে পা থেকে মাথা মাথা থেকে পা মাঝে মাঝে বুকে— তাও আশ্রিত মাটির গাছমতো নয় গোলপোস্টে পৌঁছে দিতে পারলে সর্বার্থ জনম তোমার সেইজন্য আমি প্রস্তুত— মূলত প্রস্তুত করা হয়েছে তোমার পা থেকে যে ভাষা আমার দিকে তেড়ে আসে— তাই আমার নিয়তি তোমার মাথা থেকে যে কথা আমায় শেখানো হয়— তাই আমার
দুর্যোধনের হুশ
আশা নদীর পাড়ে বসে লিখি জীবনকথা কৃষক আমি ফসল তুলে জয় করি সব ব্যথা আষাঢ় শ্রাবণ বর্ষা আমার জলজোয়ারে থাকি কষ্ট পেলে মনের কথা গপ্পেসপ্পে আকি তোমরা যারা কৃষক কেটে বানাও রাতের সুখ শাষণ তাপে সূর্য গলে ভাঙে আমার বুক মদের গ্লাসে মিছিল মিলন চলে এসিশোক শ্রমিক আমি ঘামে কথা মর্মে আমার দুক তোমার চোখে গাধা আমি মূল্যহীন এক লোক ষড়ঋতুর কালেও আমি ফসলঋতুর মানুষ তোমরা যারা উঁচু গলায় বাজাও পুতুল সুর নও কৃষ্ণ তোমরা আসল দুর্যোধনের হুশ বেচে থাকলে বাচাও কৃষক বাচতে আমি চাই রাজা হবে কর্মে কৃষক ভেদাভেদ তার নাই
সিগ্রেট ও পুরুষ
ইমিগ্রেশনের যাবতীয় কাজ শেষ করে বাংলাদেশে পা রাখলাম। দূর পথের যাত্রায় আমার একমাত্র বাহন ট্রেন। এখন তো বাসে ওঠতেই হবে। কারণ বাস ব্যতীত যশোরের বেনাপোল টু ঢাকা আসার অন্য কোনো সহজ বিকল্প পথ নেই। ভাবছি কী করবো। মনকে বললাম হাজার হাজার লোক বাসে চড়ে, আমিও চড়তে পারবো। আর যদি বমি করি তাতে কী, বমি হতেই পারে। বমি করবো এমন একটি মানসিক প্রস্তুতিও শেষ। সোহাগ কাউন্টার থেকে হিমেল দুটি টিকিট নিল। তাও আবার এসি বাস। সাধারণ বাসে যদিও বমি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে, এসি বাসে বমি হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। বাসের পেছনের দিকে আমাদের সিট। আজকে মৃত্যুর স্বাদ নিতেই হবে। মৃত্যুর স্বাদ বললাম এই কারণে যে মৃত্যুর সময় শুধু আত্মা বের হতে চাই, আর বমির সময় আত্মাঘর যেন বের হওয়ার জন্য কমিটি গঠন করে। বাসে
জোছনা সুন্দর বিড়ালের বাচ্চাটা
বনফুলের একটি গল্প পড়লাম। রাত অনেক। দুইটা বাজে। বৃষ্টি তার আয়োজন করছে পৃথিবীতে নেমে আসার। আজকে সারাদিন দারুণ বৃষ্টি ছিলো। ও! একটি কথা বলা হয়নি— আজকের ইদের দিন। আজকে না ঠিক। ঠিক করে বললে গতকাল ইদের দিন ছিলো। বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে মানুষ পশুকে রান্নার উপযোগী করে তুলেছে। টিনের চালে বৃষ্টি পড়লে আমার মন আনন্দে নাচতে থাকে। সরকার আমিন ভাই সুন্দর করে বলেন একটি কথা— বৃষ্টি সৃষ্টির মদ! বনফুলের যে গল্পটা পড়ি তার নাম ‘হিসাব’— পদ্মাবতী যার ডাকনাম পদি, রামচরণ, গল্পকথক ‘হিসাব’ গল্পের রক্তপ্রবাহ। পদ্মাবতী দেখতে বেশ সুন্দর কিন্তু আর্থিকভাবে নির্ভরশীল। গল্পকথক পদিকে বলেছেন ‘গরিবের মেয়ে’— ফলে পাড়াপড়শির ফরমাশ শুনাও পদির অনিবার্য কাজ। গল্পটা পদির বিয়ে হওয়া না হওয়ার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। গল্পে রামচরণ বিবাহিত পুরুষ— বেশ জাদরেল লোক— হাজারখানেক অথবা হাজার দেড়েক টাকা