You are here

ক রো না বি ন তে কো ভি ড উ নি শ [ চতুর্থ পর্ব ]

…বলছিলাম রাবনের কথা। রাবন ব্রাহ্মণদের কাছ থেকেও খাজনা নিতেন। ব্রাহ্মণরা হুজুর টাইপের মানুষ। দোয়া দরুদ তপ জপ করা যাদের কাজ। তারা খাজনা দিবে কোথা থেকে। খাজনা দিতে অক্ষম ব্রাহ্মণদের কাছ থেকে রাবন রক্ত নিতো, নিয়ে মাটির পাত্রে সংগ্রহ করতো।

ব্রাহ্মণরা অভিশাপ দিলো— এই মাটির পাত্র যেখানেই রাখা হবে সেখানেই অভাব অনটন দেখা দিবে। রাবন জানতো ব্রাহ্মণদের অভিশাপ সত্য হবে। তাই সে রক্তভরা মাটির পাত্র মিথিলার রাজা জনকের রাজ্যে রেখে আসে রাতের অন্ধকারে। জনকের রাজ্যে অভাব দেখা দেয়। জনক রাজা অভাব থেকে পরিত্রাণের জন্যে বিধান সভার সাহায্য প্রার্থনা করে। বিধান সভা তাকে হালচাষের পরামর্শ দেয়। রাজা জনক হালচাষ করতে গিয়ে বাচ্চা  সীতার দেখা পায়। সীতা মানে তাই হলরেখা।

জনক রাজার হালচাষের বিষয়টি মেটাফর হিসাবে নিলাম। অর্থাৎ রহস্যে ভরপুর এই বসুন্ধরার রহস্যময় ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দিয়ে থাকে কৃষি কাজের প্রতি দুর্যোগকালে বিশেষ নজর দিতে। দুর্যোগকালে কেন, সব কালেই কৃষি কাজের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া আবশ্যক। আজকের এই করোনাবাহী বিমান পৃথিবীর সব দেশের এয়ারপোর্টগামী বিমানের হতধী অবস্থার ব্যালেন্সশিট। গার্মেন্টস শিল্প কাপড় উৎপাদন করতে পারবে। কিন্তু খাবার উৎপাদন করবে কে?  সো কল্ড ইন্ডাস্ট্রি প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান করতে পারবে, আবার তাদেরকে পোটেনশিয়াল থ্রেটেও রাখবে দিনের পর দিন যাতে তাদের মেরুদণ্ড নরম লেকলেকে হয়ে উঠে, যাতে তারা কোনোকালে ত্রান নেয়ার যোগ্যতা না হারায়।

ইন্ডাস্ট্রির বিরোধিতা করছি না। ইন্ডাস্ট্রির বিরোপন মৃতভাস নিয়ে কথা বলছি মাত্র।

করোনা ভাইরাস টেস্ট করা হচ্ছে মলিকুলার ডায়াগনস্টিক টেস্ট পদ্ধতিতে যার প্রধান প্রযুক্তি রিয়েল টাইম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন ( RT— PCR)। আরও আছে ‘পয়েন্ট অব কেয়ার’ কিট ও ডিভাইস, যেগুলোকে সাধারণত বলা হয় র‍্যাপিড টেস্ট।

আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার হৃদপিণ্ড বলা হয় ডায়াগনস্টিক টেস্টিংকে। ডায়াগনস্টিক কিট ও ম্যানুফেকচারিং বায়োটেক ইন্ডাস্ট্রির প্রধান কারিগর মূলত লাইফ সাইন্স গ্রাজুয়েট।

মেডিকেল ডিভাইস ইন্ডাস্ট্রি অবশ্যই সময়ের দাবি। এর মানে ত এই নয় যে লুঙ্গি খুলে টুপির ব্যবস্থা করতেই হবে।

আমরা লুঙ্গি খুলে টুপির ব্যবস্থা করছি কিনা তা উপলব্ধি করার জন্যে কয়েকটি গুগল টাইপ ইনফরমেশনই যথেষ্ট।

আয়ুর্বেদ ও ইউনানি পদ্ধতির চিকিৎসায় পাকা ফল ল্যাকজেটিভ, রোচক ও টনিক বা বলকারকরূপে ব্যবহৃত হয়। রাতকানা ও অন্ধত্ব প্রতিরোধে পাকা আম এমনকি কাঁচা আম মহৌষধ। কচি পাতার রস দাঁতের ব্যথা উপশমকারী। আমের শুকনো মুকুল পাতলা পায়খানা, পুরনো আমাশয় এবং প্রস্রাবের জ্বালা-যন্ত্রনা উপশম করে। জ্বর, বুকের ব্যথা, বহুমূত্র রোগের জন্য আমের পাতার চূর্ণ ব্যবহৃত হয়।

আজকাল কত ধরনের আমের নাম আমরা শুনতে পাই। কিন্তু কয়েকপ্রকার আম দেখতে পাই। বদরুল আসমার, রত্না, বেনারসি ল্যাংড়া, হিন্দি, খান বিলাস, সুন্দরী, বৃন্দাবনি, বাতাসা, বাদশা, চোষা, দুধ কুমারী, দুধ কুমার, মাধুরী, কৃষ্ণকলি, কলম সুন্দরী, হুসনে আরা, জামাই পছন্দ, গোপালভোগ, আমরুপালি, ফজলি, নীলাম্বরী।

নীলাম্বরী নাম শুনলেই কেমন রাধা রাধা একটা ফিল আসে। এক সময় এতো নামের খবর বাংলার মানুষ জানতো না। কিন্তু আমমাখা দুধভাত দারুন প্রিয় এই ভারতবর্ষের মানুষের কাছে। জামে যেনো গাছে একখণ্ড মেঘ এসে জমা হতো। এখন মাতৃগাছ মাতৃভূমি থেকে দিনে দিনে উধাও হয়ে যাচ্ছে।  মাতৃভূমিতে ঠাই করে নিচ্ছে বিভিন্ন প্রকারের জ্বালানি গাছ, কাঠগাছ। কাঠগাছ অবশ্যই আমাদের প্রয়োজন। আমরা কেন ভুলে যাই মাতৃগাছও কাঠগাছ। কাঠাল গাছের কাঠ খুবই ভালো। মাতৃগাছগুলো যেনো একের ভেতর পাচ।

নিজস্ব প্রজাতির ধান ছিল আমাদের। চীনা ভাষার Ou-liz শব্দটি আরবিতে Oruz ও গ্রিক ভাষায় Oryza হয়ে শেষে Ritz ও Rice হয়েছে। ধান বা ধান্য শব্দের উৎপত্তি অজ্ঞাত। চামারা, বাশিরাজ,গাঞ্জিয়া, বাশফুল, রাতা বোরো, আঁশযুক্ত লাল বিরুই,হালকা আঁশযুক্ত লাল বিরুই, নুনিয়া, কালো জিরা, চিনিগুড়া, তুলসীমালা, বোনোতোষ, পাইজামসহ প্রায় ২৫০ প্রজাতির ধান ছিল আমাদের নিজস্ব। পাইজাম ধানের গন্ধে মন ব্যাকুল হয়ে যেতো। যদিও পাইজাম দেশী কিনা এই নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। বলা হয়ে থাকে পাকিস্তানের প, মালেশিয়ার ম, জাপানের জ থেকে পাইজাম নামকরণ করা হয়েছে।

নিজস্ব ধান ত দূরের কথা, আমাদের যারা কৃষক তারা আর কৃষিকাজ করতে রাজি না। তারা কৃষিকাজ ছেড়ে ডায়বেটিস কারখানায় কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। কৃষকের সন্তান আজ শিক্ষিত। শিক্ষিত সন্তান আজ বাবার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাবাকে কৃষিকাজ করতে দিচ্ছে না। বাবাও চাইতো সন্তান শিক্ষিত হোক, কুলুর বলদ বা কলুর বলদ জীবন থেকে সে নিস্তার পাক অথবা এমন কলুর বলদ জীবনে যেনো তার সন্তানকে না থাকতে হয়।

দেশী তেল পেশাই যন্ত্রকে ঘানি, ঘানিযন্ত্র, ঘানিকল বলা হয়। অর্থাৎ যে যন্ত্রে সর্ষে বা সেরকম কোনো তৈলবীজকে নিষ্পেষণ করে তেল ও খোল আলাদা করা হয়। ‘তৈল নিষ্পেষণ’ একটি প্রাচীন জীবিকা। এই পেশার লোকেদের বলা হয় কলু।

ঘানি কাজ করে ঘূর্ণন দ্বারা। সাধারণতঃ ঘানি টানবার জন্য বলদ ব্যবহার করে। অর্থাৎ ঘানি ঘূর্ননের জন্যে কলু যে বলদ ব্যবহার করে তাই ‘কলুর বলদ’। সারাদিন একটানা ঘানি টানা যার কাজ। কলুর বলদের অনেক সময় চোখ বাঁধা থাকে। ঘানি টানা খুব পরিশ্রমের কাজ। তাই আগেকার দিনে সশ্রম কারাদন্ডের বন্দীদের দিয়ে ঘানি ঘোরানো হত। তাই থেকে জেলে যাওয়াকেই অনেক সময় জেলের ঘানি ঘোরানো বলা হয়।

আমাদের কৃষক এই কলুর বলদ জীবন থেকে নিস্তার পেয়েছি কিনা পরিপূর্ণভাবে এই কথা ভাবনাতে আসার আগে চোখের সামনে ভেসে উঠে কালভার্টে ব্রিজ বিল্ডিংমুখী উন্নয়নের পতপতে পতাকা। তবে আজকের দিনের এই করোনাবাহি বিমান আমাদেরকে এমন দেশে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে যেই দেশ নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থার প্রত্যেকটি ধাপকে গতিশীল করার প্রয়াস জানায়।

সৌদি সরকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার খরচ করে জর্ডান ও মিশর সীমান্তে লোহিত সাগর ও আকাবা উপসাগরকে কেদ্র করে দশ হাজার দুইশো ত্রিশ বর্গমাইলের ‘নিয়ম’ প্রকল্প বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতেই পারেন। এই মেগাসিটির জন্যে মোহাম্মদ বিন সালমান হোয়াইতাত নামে বেদুঈন গোত্রের প্রায় বিশ হাজার লোককে উচ্ছেদ করার সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। কিন্তু করোনাকালে মক্কা শরীফ বন্ধ, তেলের দাম নেমে আসছে। তেল আর মক্কার হজ্জ কাফেলা থেকে সৌদি সরকার সবচেয়ে বেশি আয় করে। অর্জিত আয় দিয়ে আমেরিকা থেকে আনা ভাড়াটে সৈনিক দিয়ে নিজেদের হেফাজতের কার্যপ্রক্রিয়া সম্পাদনা করে থাকে। এখন?  এখন? এখন সৌদির রাজপরিবারের অবশ্যই ভাবনা তৈরি হবে ভাড়া করা মন্ত্র আর তন্ত্র দিয়ে ইরানের সাথে নিজেদের তুলনা করা যাবে না। রেজা শাহ পাহলভীর ইরান আর এখন নেই। এখনকার ইরান শিক্ষা চিকিৎসা সিনেমা স্বাস্থ্যে প্রায় নিজস্ব মন্ত্রে তন্ত্রে দীক্ষিত। ইরান হয়তো কিউবার মতো চিকিৎসক অন্য রাষ্ট্রের সেবার কাজে পাঠাতে পারছে না কিন্তু নিজেদের প্রয়োজন নিজেরা ফোলফিল ত করতে পারছে। এটাই সাফিসিয়েন্ট। সাফিসিয়েন্ট শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত হতে পারে নাই বিধায় নদী হত্যা করে পুকুরে মাছ চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়ি যা কিনা বাংলা প্রবাদে গরু মেরে জুতা দান। সমস্যা নাই। গরু মেরে তার চামড়া দিয়ে জুতা ত বানিয়ে দিলেন। তাও কম কী!?

ফসল বিষয়টি বরাবরই পরকালের মতো গোপন বলে মনে করানো হয়েছে আমাদেরকে। রেজাল্ট শব্দটি বুঝলেও ফসল শব্দটি আমরা বুঝি না। আমাদের ঠিক বোঝানো হয় নাই। সব বিষয়ে পাশ করলে রেজাল্ট ভালো হয়। কোনো একটি সাবজেক্টে অকৃতকার্য হলে রেজাল্ট খারাপ। অথচ ফসল বলতে আমরা শুধু বুঝি ধান বা পাট অথবা সরিষা। ত্রিশ শতাংশ জমিতে আগে ধান হতো সাত থেকে আট মুন। তাও কৃষক কৃষিকাজ করতো, এখন ত্রিশ শতাংশে ধান হয় বিশ থেকে ত্রিশ মুন, এখন কৃষক কৃষিকাজ করে না। কিন্তু এই কথা ভুলে গেলে চলবে না আগে জমিতে একপ্রকার নাড়া হতো যা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যেতো, বর্ষাকালে আউশ ধান হতো, জলের সাথে সাথে বেড়ে উঠতো তার শরীর, এখন তা হয় না।

জমিতে বর্ষা শেষে প্রচুর মাছ হতো— পুটি মাছ, হিং মাছ, মাগুর মাছ, জাগুর মাছ, লাডি মাছ, বাইম মাছ, কই মাছ, কাতলা মাছ, গুত্তুম মাছ, টেংরা মাছ, ইছা মাছ, বৈছা মাছ, বাশপাতা মাছ। এখন ক্ষেতে ত দূরের কথা নদীতেই মাছ নাই। বর্ষার জলে হালুক পাওয়া যেতো, পাওয়া যেতো শাপলা যা সবজি হিসাবে ধারুন পথ্যি।

কৃষক ধান ভাঙানোর পর চাল পেতো, পেতো কুরা, কুরা গরুর খাবার, পেতো চুহৈল যা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যেতো, গরু থেকে পেতো গোবর যা জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হতো, ধানগাছ হয়ে যেতো বন, বন থেকে গরুর খাবার, চালকে দুইভাবে দেখা হতো— হুদ চাল, মূল চাল। হুদ চাল দিয়ে গরুকে ঝাও করে খাওয়ানো যেতো, আবার হুদটালাও কৃষক ঘরে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। হুদটালা আর হুটকির ভর্তা খুবই জনপ্রিয় খাবার। পাট থেকে যে হুলা পাওয়া যেতো তা থেকে হতো জ্বালানি, পাটের ছোবরা থেকে হতো জ্বালানি। গরুর গু আবার জৈবসার। সরিষার গাছ জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হতো, সরিষা ভাঙানোর পর মানুষ পেতে নির্ভেজাল খাটি হুওরার তেল,পেতে হৈল। হৈল আবার গরুর খাবার। বর্ষায় কচুরিপানা ভেসে আসতো ক্ষেতে। ক্ষেতে জল টইটম্বুর করতো। কচুরিপানা দিয়ে গরুর খাবার হয়ে যেতো। বর্ষা শেষে ক্ষেতেই পড়ে থাকতো কচুরিপানা। তাকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা যেতো আবার জৈবসার হিসাবে ব্যবহার করা যেতো।

প্রতি বছর ঘরের চালে ছই গাছ বড় করে তুলতেন কৃষানি। প্রথমে ছই রান্না করে খাওয়া হতো, পরে পাকনা ছইয়ের অল্প কিছু অংশ বীজ হিসাবে রেখে বাকি অংশ ভেজে ভেজে সারা বছর খাওয়া হতো, বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে। টানা বৃষ্টি হতো, দশ থেকে এগারো দিনব্যাপী বৃষ্টি। আর এখন?  এখন তো পুলাফানের মুতের লাহান বৃষ্টি হয়, দশ বিশটা পুলার মুত একসঙ্গে করলে যে পানি হয় সারা বছরে সেই পরিমান বর্ষাও হয় না। কেন এমন হলো কেন এমন হয়?

এক লোক অসুস্থ হয়ে গেলেন। তিনি আর কোনোভাবেই সুস্থ হচ্ছেন না। না, তার করোনা হয়নি। তার কোনো প্রকার রোগও পাচ্ছে না ডাক্তার। দিনে দিনে রোগী যখন মৃত্যুর দিকে যাচ্ছে তখন হঠাৎ একজন ডাক্তার নোটিশ করলে রোগীর মুখে মারাত্মক দুর্গন্ধ হচ্ছে। ডাক্তার ভাবলেন রোগীর দাতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা দরকার। পরীক্ষা করে দেখা গেলো চাফার দাতের মাড়ি দিয়ে ফুইজ বের হচ্ছে।

(ডেন্টাল প্লাক হলো ব্যাকটেরিয়া কিংবা অন্যান্য জীবাণু দ্বারা তৈরি এক ধরণের আঠালো পদার্থ যা দাঁতের চারপাশে লেগে থাকে। এঁকে ব্যাকটেরিয়ান প্লাকও বলা হয়ে থাকে। মূলত Streptococcus Mutants, Lactobacilli ব্যাকটেরিয়ার ফলে ডেন্টাল প্লাক সৃষ্টি হয়। ডেন্টাল প্লাক ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তৈরি হয়ে থাকে, এটি দাঁতের সাথে লেগে থাকে, যদি এটি ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পরিষ্কার না হয় তবে তা ধীরে ধীরে শক্ত হতে থাকে এবং ৯ থেকে ২১ দিনের মধ্যে এটা পাথরের রুপ ধারন করে মাড়ির সঙ্গে শক্তভাবে লেগে থাকে। ডেন্টাল প্লাক পাথরের রুপ ধারন করার পর মাড়িতে ব্যাথা অনুভব ও মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া এবং দাঁত শিরশির করে। এই অবস্থাকে বলা হয় জিনজিভাইটিস বা Inflammation of the gingiva। জিনজিভাইটিস হওয়ার পরও যদি সচেতন না হয় তবে পরবর্তীতে মাড়ি লাল হয়ে যাওয়া, মাড়ী দিয়ে রক্ত পড়া, মাড়ি ও দাঁতের সংযোগস্থলে পুজ হওয়া, মুখে বিশ্রী গন্ধ, দাঁত নড়বড়ে হয়ে যায় এবং পরে যায়। এই অবস্থাকে পেরিওনটাইটিস বলা হয়ে থাকে। এসব মাড়ির রোগ মূলত যারা দাঁতের প্রতি যত্নশীল না, যাদের আঁকাবাঁকা দাঁত এবং গর্ভবতী মহিলাদের হরমোন পরিবর্তনের কারণে বেশী হয়ে থাকে।)

এই ফুইজ রোগীকে ভালো থাকতে দিচ্ছে না। রোগীর দাতের চিকিৎসা করা হলো। রোগী আস্তে আস্তে সুস্থ হতে থাকে। সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া কাজকর্মে মনোযোগ দেন। এখন প্রশ্ন যদি করি— সমস্যা ছিল শরীরের একটি কেন্দ্রে— তাহলে কেন সারা শরীর অসুস্থ হয়ে গেলো? উত্তর আসবে প্রত্যেকটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রত্যেকের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত,সম্পর্কিত। আমরা আমাদের বানানো রাসায়নিক বিষক্রিয়া প্রকৃতির উপর প্রয়োগ করে প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খল নষ্ট করে ফেলেছি। ফলে প্রকৃতিতে দেখা দিচ্ছে ভয়ঙ্কর বিরূপ প্রতিক্রিয়া।

অথচ একটা কৃষক পরিবার ছিল পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যের আখড়া  হিতকারী খাদ্যের আধার। ফলে ডাক্তার বিষয়টি তাদের কাছে বরাবরই অচেনা ছিল। মৃত্যুই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় রোগ।

আর এখন?

প্রত্যেকটি ঘর একটা ভাসমান হাসপাতাল। ঘরে ধান আসতেছে ঠিকই কিন্তু ফসলের যে পরিপূর্ণ আইডিয়া তা আর নেই। অত্যাধুনিক বিষক্রিয়া, ফার্টিলিটি বৃদ্ধির প্রকল্পে বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ব্যবহারের ফলে মাটির গুনগত মান নষ্ট হচ্ছে। মাটিকে বাচতে দিচ্ছে না মানুষ। মাটি কিন্তু গাছকে বাচায় না, গাছ মাটিকে বাচায়। সাধারণ একটি বিষয় নোটিশ করলেই বিষয়টি উপলব্ধ হওয়ার কথা। নদীর ভাঙন রোধ কল্পে গাছ লাগানো হয় মাটির শরীরে। মরুভূমিতে কেন গাছ জন্মে না? সহজ কথা, মরুভূমি-মাটির মিন্সট্রেশন বন্ধ।ফলে স্বামীর মিললেও বাচ্চা হবে না তার।

কোনো মাটি যখন তার উর্বরতা শক্তি হারায় তখন সে কাঁটা গাছের জন্ম দিয়ে এসওএস বার্তা দিয়ে থাকে। গাছ প্রতিনিয়ত দিনের আলো ব্যবহার করে সূর্য থেকে খাবার সংগ্রহ করে শেকড় দিয়ে মাটির সৈনিকদের কাছে খাবার পৌঁছে দেয়, ফলে মাটির সৈনিকরা বেচে থাকে, মাটি থাকে নিরাপদ সুস্থ। আর মানুষ? এই গাছ, গাছের আবাসভূমি জঙ্গলকে, মাটিকে ধর্ষণ করে চলছে, জলকে ধর্ষণ করে চলছে। মাটি জল মামলা করবে কার কাছে?  জলাভূমির দেশেও জল কিনে খেতে হয়। এটাই নাকি উন্নতি। এটা উন্নতি নয়। এটা গরু মেরে জুতা দান।

কাজী নজরুল ইসলাম। বাংলাদেশের জাতীয় কবি। জাতীয় কবি বলে তার রচনা কিন্তু জাতীয় সঙ্গীত নয় এখানে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিশাল অবদানে তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি হলেন। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশের মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠক শেখ মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় পতাকা থেকে দেশের মানচিত্র বাদ দিয়ে জাতীয় পতাকা চূড়ান্ত করা হয়, ‘আমার সোনার বাংলা’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা যা জাতীয় সঙ্গীত, ‘চল চল চল’ কাজী নজরুল ইসলামের রচনা যার প্রথম একুশ লাইন জাতীয় কুচকাওয়াজ সংগীত হিসাবে গৃহীত হয়।

২৩ চৈত্র ১৩২৭ সালে নজরুল ইসলাম কুমিল্লার মুরাদনগরের দৌলতপুর গ্রামে আসেন। তিনি এখানে ৭১ দিন অবস্থান করেন। ১২০ কবিতা ও ১৬০ গান রচনা করেন বলে মনে করা হয় দৌলতপুর থাকা অবস্থায়।

দৌলতপুরের মেয়ে সৈয়দা আসার খানম। বাবা নাম রেখেছিলেন দুবরাজ, সবাই ডাকত দুবি। মামারা বলত, যুবরাজ আর যুবি। মুন্সি আব্দুল খালেক অকালেই যুবি আর তার ভাইবোনকে রেখে জান্নাতের সুখ ভোগ করার জন্যে চলে যান। ফলে সৈয়দা আসার খানম ও তার পরিবারের দেখভালের দায়িত্বভার ভর্তায় খানদের উপরে বিশেষ করে আলী আকবরের উপরে।

আলী আকবর নজরুল ইসলামকে দৌলতপুর নিয়ে আসেন। যুবিকে দেখে নজরুল ইসলামের মন উতলা হয়ে উঠে। যুবিকে প্রেমের প্রস্তাব দেন তিনি। যুবির নাম দিয়ে দিলেন নার্গিস। নজরুলের প্রিয় কবি নাকি হাফিজ। হাফিজের কবিতায় নাকি নার্গিস ফুলের কথা আছে। তাই সৈয়দা আসার খানমের নাম দিলেন তিনি নার্গিস। কিন্তু নার্গিস নিয়ে যে পৌরানিক কাহিনি বিদ্যমান তা তো খুবই হৃদয়বিদারক। নার্সাসিসের করুন পরিনতি নার্গিস। অর্থাৎ নার্সাসিস নিজপ্রেমে এতো ডুবে গিয়েছিলেন যে মুখ ডুবিয়ে জল পান করার কথা ভুলে যায় সে। ফলে তৃষ্ণায় বুক ফেটে মারা যায় সে। তার মৃতদেহ থেকে নার্গিসফুল। এই কাহিনি কি কাজী নজরুল জানতেন, নাকি জাদুকাব্য রচনার স্বার্থে তা তিনি মিউট করেছিলেন!?

জাদুকাব্য রচনা করে নার্গিসকে প্রেমিকা করে তুললেন এবং বিয়ে করলেন। বিয়েরাতে চলে গেলেন শ্রাবন মাসে আসবে বলে। শ্রাবন মাস আসে শ্রাবন মাস যায় কিন্তু আমাদের কাজীদা আর আসেন না নার্গিসফুলে ঘ্রানমুগ্ধ পথিক হতে।

প্রথম পর্ব – ক রো না বি ন তে কো ভি ড উ নি শ (প্রথম পর্ব)
দ্বিতীয় পর্ব – ক রো না বি ন তে কো ভি ড উ নি শ (দ্বিতীয় পর্ব])
তৃতীয় পর্ব – ক রো না বি ন তে কো ভি ড উ নি শ [তৃতীয় পর্ব]

Leave a Reply

Top