You are here

দিল্লির স্মৃতি

সিকিউরিটি ঢুকতে দিবে না। দিবে না তো দিবে না। আমার সাথের তারা আশা ছেড়ে দিয়েছে। আমি শালা সহজে পরাজিত হওয়ার মানুষ না। আমি জানি পৃথিবীতে নিজের ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য কোনো না কোনো উপায় থাকে। জাস্ট আবিষ্কার করতে হয়।

আমাদের কেন ঢুকতে দিবে না?
কারন আমরা জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না।

রেজা ভাই, চলেন চলে যায়…

কোনো কথা না বলে সিকিউরিটির কাছ থেকে দূরে গেলাম, গেলাম গেইটের কাছে বসা এক ছাত্রের কাছে। সমস্ত বিষয় খোলাখুলি বললাম। হিন্দি তেমন পাড়ি না। তারপরও আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছি।

ভূপেন্দ্র দা যথেষ্ট সহযোগিতা করলেন। হামিদ ভাই নিজের আইডি কার্ড দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছে। আমরা জে এন ইউ ক্যাম্পাসে ঢুকতে সক্ষম হয়েছি।

ক্যাম্পাসটি মুগ্ধকর। অনেকটাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অথবা চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের টাইপের। তবে চরিত্রগত পার্থক্য তো আছেই। দিল্লি আর ঢাকা বলে কথা। এখানকার প্রত্যেকটি হল নদীর নামে করা। আমার প্রিয় নদী ঝিলাম নদীর নামে জে এন ইউতে হল আছে। মেয়েরা এখানে গোয়ালের অধিবাসী নহে। মেয়েরা অনায়াসে ছেলেদের রুমে যেতে পারে কিন্তু ছেলেরা দৌড়ঝাঁপ করতে পারে মেয়েদের হলের গেস্টরুম পর্যন্ত।

এখানে মেরুদন্ড আছে এমন ছাত্র অনেক। আট হাজার ছাত্রের মধ্যে সাত হাজার ছাত্রের সিটের ব্যবস্থা আছে, এক হাজার ছাত্রের তা নেই। মেরুদন্ডওয়ালারা সেই এক হাজার ছাত্রের সিটের জন্য আন্দোলন করে।

ক্যাম্পাসেই দেখা হলো দিপ্সীতা ধর নামে একজনের সাথে— দারুণ উচ্ছ্বাস আর উচিৎ আবেগ তার চোখেমুখে— তার সাথে আমরা কথা বলি বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা নিয়ে— ভালো ভালো কথা বলে— আবেগের কমতি নেই— শুক পাখির ঠোঁটের মতো তার কথালাপ— গণজাগরণ মঞ্চ নিয়েও সে তারুণ্য প্রতিবাদের মতো ধণাত্মক কথা বলে। তবে গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে যে মন্তব্য-মতামত সে প্রকাশ করে তাতে বুঝতে পারি রাজনৈতিক গভীর জলচরী চলল সম্পর্কে প্রায়ই তার ভাসমান ধারনা রয়েছে যা ভবিষ্যতে তাকে সংকট সিদ্ধান্ত নিতে ঝামেলায় ফেলতে পারে— এটা কেবলই আমার হাইপোথিসিস।

তবে তাকে দেখে তার সাথে কথা বলে মনে হয়নি সে কোনো আটপৌরে কুঁচি-ভাঁজ জীবনের পক্ষে স্লোগান মাতানো কন্যা। এই নিষাদ কন্যা নিশ্চয়ই মানুষের জন্যে জীবনের সামগ্রিক কল্যানে দায়বাচক কোনো না কোনো ভীমরাজের ভূমিকা রাখবে।

পরে জানতে পারি রাজনীতি দিপ্সীতার রক্তে— দিপ্সীতা হাওড়া জেলার ডোমজুড়ের তিনবারের আইনসভা সদস্য (বিধায়ক) পদ্মনিধি ধরের নাতনী এবং বাঙালি নেপথ্য গায়ক শোভন গাঙ্গুলির চাচাত বোন। ১৯৩৫ সালের ২২ জুলাই তৎকালীন পূর্ববঙ্গের বরিশাল জেলার বানোয়ারীপাড়ার বাইশআড়ি গ্রামে পদ্মনিধি ধরের জন্ম। বাইশআড়ি হাই স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় তার পরিবার পশ্চিমবঙ্গে চলে আসে।

লাইব্রেরিতে ঢুকলাম। সিট খালি নেই। তবে চীনের ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরির মতো এখানে একটি নতুন দৃশ্য দেখি— লাইব্রেরিতে ল্যাপটপ নিয়ে পড়াশোনা করা। ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা জে এন ইউ ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরাও করে। তবুও ফ্রিডম চত্ত্বর বলে জে এন ইউতে একখান প্রমিথিউস এলাকা তো আছে যেখানে এখনো কিছু মানুষের গান চলে।

দিল্লী জামে মসজিদে কোনো ফ্রিডম চত্ত্বর নেই। এখানে মানুষ আসে প্রার্থনার কাছে বন্দী হতে। আমিও এখানে এসে প্রার্থনার কাছে বন্দী হলাম…

Leave a Reply

Top