সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা প্রকৃতির অপার মহিমায় লালিত নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার প্রায় ত্রিশ হাজার লোকের আবাস ভূমি সল্লাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ। পরিবার সংখ্যা ৫ হাজার ১৭০ টি। গ্রামের সংখ্যা ৩টি। মৌজার সংখ্যা ৪টি। হাট-বাজার সংখ্যা ৪টি। ইব্রাহিমপুর মুক্তিযোদ্ধের বধ্যভূমি, ইব্রাহিমপুর সৈয়দ মো. আ. খালেক শাহ (রা.) এর মাজার শরীফ এই ইউনিয়ন পরিষদের যেনো মোমবাতি রেখা। আমরা সল্লাবাদ গিয়েছি। উদ্দেশ্য সামাদ শা’র মাজার পরিদর্শন। নেংটার মাজার হিসাবেও সল্লাবাদের এই মাজারটি পরিচিতি লাভ করেছে। আভিধানিকভাবে এটি সররাবাদ দক্ষীণ পাড়া আ. ছমেদ লেংটার মাজার শরিফ নামে বেশ জনপ্রিয়। নেংটা মানে উলঙ্গ। অর্থাৎ ছামাদ সাহেব কাপড় পরিধান করতেন না। তার পীর জলিল শাহ। জলিল শা’র বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালিগুচ্ছ। নেংটা কাউকে মুরিদ করতেন না। যারা তার কাছে আসতেন সবাই তার ভক্ত। নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, সিলেটসহ বাংলাদেশের
Year: 2021
আমি এক এমরানুর রেজাকে চিনি
আমি এক এমরানুর রেজাকে চিনি যার বাড়ি মেঘনা নদীর তীরে। সে কত কিছু করে, সব কিছুই ডেমো। তার ডেমোকে ট্রেন মনে কইরা অনেকে ওঠে বসে। সময় ফুরিয়ে যায়, মাগার ট্রেন তো চলে না। একসঙ্গে যাত্রী সকল গালি দিয়া নাইম্মা পড়ে এক সময়। এমরানুর রেজা তখন মাথায় গামছা বেঁধে মেঘনা নদীতে নৌকা চালাইতে যায়, গুদারা ঘাট থেইক্কা ডাক আহে— এই মাঝি নিয়া যাও, নিয়া যাও। নারী কণ্ঠের ডাক। এমরানুর রেজা তখন হালুবালু কইরা গুদারা ঘাটের দিকে যায়। নারী নৌকায় ওঠে— হিলহিল কইরা হাসতে থাকে মাঝির বইটা। বইটা চালাইতে চালাইতে মাঝি ক্লান্ত হয়ে যায়, দূরে কিনারা দেখা যায়, কিনারার লাগাল পাইনা মাঝি। নদীর মাইদদে নৌকা থেমে যায়। আতকা আচানক এক বাতাস আহে, ঘূর্ণি বাতাস— এমরানুর রেজা, তার নৌকা আর সেই নারী কোথায় যেন হারিয়ে
মানুষ এক আধ্যাত্মিক পাহাড়
পাহাড়ে এক ধরনের মুখস্থ সৌন্দর্য থাকে। নদীতে থাকে এক ধরনের আধ্যাত্মিক আনন্দ। পাহাড় কিংবা নদী কোথাও আমি এমন আনন্দ পাই না যেমন আনন্দ পাই মানুষের সাথে আড্ডা দিয়ে। মানুষ এক আধ্যাত্মিক পাহাড়, আধ্যাত্মিক নদী, আধ্যাত্মিক আকাশ। অন্ধকারের পেছনে আলো থাকে, ঠিক আলোর পেছনে থাকে লোকটি। লোকটির নাম নাকি মানুষ। লোকটির নাম আসলে মানুষ নয়, লোকটির নাম আলো এবং অন্ধকার কিংবা তারচেয়েও অধিক কিছু। এক সময় আমরা এক ঘরে ছিলাম। একই মায়ের হাতের রান্না খেয়ে পড়ার টেবিলে বসতাম। সেই পড়ার টেবিল একই জায়গায় আছে, মায়ের হাতের রান্না একই আছে, আমরা আর আমাদের জায়গায় নেই, ছড়িয়ে গেলাম মাইল টু মাইল— পড়ার টেবিল সম্পর্কের চেয়েও শক্তিশালী।
তোমার লেখা থামাও
লেখক! তোমার লেখা থামাও। লেখাতেই তুমি পরাধীন। লেখার কারণে তোমার প্রিয় অপ্রিয় হয়ে যাবে। লেখার কারণে চাকরিটা তোমার অকালেই হারাবে। বাইরে যত আগুন আছে হৃদয়ে খেলা করবে, দহন তোমার সুজন হবে, সুজন দৌড়ে পালাবে। যে গরুটা গোয়াল চিনে না, সেও তোমাকে জানবে, ঘাসজ্ঞানে তোমার তোমাকে পাতাল-নরকে নামাবে। লেখক তোমার লেখা থামাও! নইলে বাঁচার আগেই মরবে। পাঁচ বছরের শিশুটা তোমার ‘বাবা বলে’ কাঁদবে। ভুলে যাও তুমি, এখনি ভুলে যাও পুরাতন যত শ্লোকের হাপর— সংসার বিষবৃক্ষশ্চ দ্বে এব রসময় ফলে কাব্যামৃত রসাস্বাদনং সঙ্গম সুজনৈসহ তেলের একটি দোকান খুলে দোকানী হও বাজার মানে কন্যা-পুত্র সংসার নিয়ে দিন কেটে যাক সুরেলা গানে
গম আছো নি বা
বাতাসে কান পেতে থাকি তোমার শব্দগন্ধের আশে দরজা যখন বন্ধ হতে চায় আমি তো তারে ন থামাই ন থামাই দরজা যখন বন্ধ হয়ে যায় ‘গম আছো নি বা’ মুই ন জিগাই মুই ন জিগাই আসমানের লগে মেঘের লগে কথা কইতে কইতে তোমার বাড়ির উঠোনে নেমেছি কাগজের বিমানে বৃষ্টি ভেবে আঁজল ভরে মুখে তুলে নিয়েছো তুমি ঠোঁটের পাশ বেয়ে তোমার কর্কটক্রান্তিরেখা বরাবর নেমে গেছি নিচে আরও আরও নিচে একেবারে বিষুবরেখা হয়ে সমুদ্রের তলতলানিতে তারপরও তুমি জানলে না তারপরও তুমি মানলে না— এসেছিলাম আমি তোমার কাছেই এসেছিলাম দরজা বন্ধ করে দিলে আস্ত একটা শব্দ হলো পরিযায়ী পাখি সারারাত তোমার বাড়ি তোমার ঘর তোমার আঙিনায় একবার ছাদ খুলে দেখলে না ঘুম তোমার ভাঙলো না ভাঙলো না কেউ যখন ঘুমিয়ে যায় আমি তো তারে ন জাগাই ন জাগাই তোমহার লগে হামার একখান কথা আছে হামি তোমহারে কেমনে বুঝাই কেমনে বুঝাই কেউ যখন বুঝতে না চায় আমি
আকাশ কিনবো নদীর পাড়ে
আমি একটা আকাশ কিনবো নদীর পাড়ে চাঁদের আলোয় তিল বসাবো নীলের গায়ে হলুদ কালার আলো থাকবে জল বরাবর জলের নিচে মাছের আবাস সুখ তরাতর বৃষ্টি এলে প্রেমের চালে শব্দ হবে চুলগন্ধ ফুলের চালে নাকে যাবে সবুজ একটা পাহাড় নামবে দূর জানালায় মেঘের একটা নহর নামবে ঘাটু ঝরনাগায় মধ্যরাতে তারার দল রীতিমতো দিবে কল সবুজ হাসি মনের দেশে উঠোন পথে চলবে হেসে আঙ্গুল আমার তোমার ক্ষেতে করবে চাষ রাত বিরাতে সবুজ একটা আলো এসে পড়বে তোমার নরম ঠোঁটে আমি তখন গরম বাতাস শরীর তোমার তুলার তাস আমি একটা বাড়ি করবো নদীর জলে তোমার সাজে ঠিক তখন আমার আকাশ সজল এক প্রেমের লাজে
বেচেঁ থাকার স্বপ্নটুকু
রাত, রাত, একটু আসো, ও রাতের তারা প্রেমের আজ বিচার হচ্ছে আন্তর্জাতিক ধারা।। ভিন্ন গ্রহের শিল্প তুমি, তোমার ছবি আঁকি শিল্প, শিল্পী কথা হবে, এইটুকু শুধু বাকি তোমার কথায় কী যে ভাবি, ভাবনা খোঁজে পাইনা অবলা শত নাবলা কথা বলেও বলা হয় না।। রাত বিকেলে ফোনে যখন তুমি আমায় ডাকো ঘুম পাড়ানির মাসি-পিসি ঘুমিয়ে তুমি থাকো আমি তখন সিড়ি ভেঙে খোলা মাঠে দাঁড়ায় ইচ্ছে জাগে মনের তোমাকে ছিঁড়ে কেটে দেখায়।। কোনো রাতের শেষ প্রহরে সেলাই ছিঁড়ে দেখায় তোমার মনের একতারা তখন দুতারাটা বাজায় বেচেঁ থাকার স্বপ্নটুকু তোমার কুলে রাখি প্রেমের বিচারের ফাসিঁ হয় না, মৃত্যুযন্ত্রণা বাকি।।
কে আছো জলের মতো
চাঁদ কোনোদিন কোনো প্রানিকে তার দিকে নজর দিতে বাধ্য করে না। প্রানিকে তার প্রয়োজনে চাদের দুধসাদা জোছনার কাছে নতজানু হয়ে বসতে হয়। সূর্য কোনোদিন কোনো মানুষকে ঘুম থেকে জেগে কাজে মনোযোগী হওয়ার কথা বলে না। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে সূর্যধর্মে নিজের কর্মধারা পরিচালনা করে। জল ডাকে না মানুষকে তার দিকে। মানুষ নিজের তৃষ্ণায় জলের দিকে ধাবিত হয়। ফুল ভুলেও ডাকে না কাউকে তার ঘরে তার সংসারে। কে আছো চাদের মতো কি আছো সূর্যের মতো কে আছো জলের মতো আমাকে ভাষা দিয়ে নয়, প্রয়োজনে টেনে নাও তোমার দিকে— তোমার ভেতরে আরও আরও গভীরে— ফুলের ❀ মতো গন্ধে ছন্দে ভাষাহীন ভাষায় বসাও হৃদয়ের নরম হিতানে।
একটি আলোর ঘর
ট্রেন চলছে। নোয়াখালী এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনপূর্ণ মানুষকে কাঁঠালের কোষ, কাঁঠালের কোষ মনে হচ্ছে। ষাটোর্ধ্ব চাচা প্রতিবেশী শরীরে হেলান দিয়ে দাড়ানো। মায়ের গর্ভের মতো এখানে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা নেই। আন্ধার থেকে চুয়ে পড়া আলোয় কিছু মুখ, কিছু ইশারা সনাক্ত করা যায়। আড়িখোলা স্টেশন। মিস্টার লোকাল এখানে কিছুক্ষণ রেস্ট নেয়। স্টেশনমাস্টারের রুম থেকে আসা তীর্যক আলো অল্পের জন্যে হলেও রেলকামড়াকে উৎসবমুখর করে তোলে। চাচার আঙ্গুল তখন দাড়িএলাকায় নিড়ানির কাজ করে। কাহা কৈ যাইবা? ফেনি। কাহা, তোমার আব্বা-আম্মার দেয়া নামডা কী? বাতিজা, গরিব মাইনসের আবার নাম। তাহলে গরীব মানুষ আমৃত্যু কোনো দিন বুঝবে না, সে আসলে গরীব নয়? তাকে যে বোঝানো হচ্ছে সে বা তারা গরীব এই কথা সে কোনোদিন জানবে না? সূর্য জেগে উঠার আগে সে উঠবে না জেগে? তাদের নামের গর্বও কেড়ে নিবে রক্তচোষা ফানুস! এই ভাবনায়
এ কেমন ব্যথা!
ব্যথা মাথা থেকে আস্তে আস্তে নিচে নামে। এ কেমন ব্যথা! বুকের বাম পাশে একটি অদৃশ্য দহন। সাদা শাড়ি গলায় দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে যে নারী সেই জানে এ ব্যথা কেমন। চোখের জলে এই ব্যথা ধীরে ধীরে কর্মহীন হয়ে পড়ে। কর্মহীন ব্যথা আবার স্মৃতির পাতায় ঢেউ তোলে। ঢেউয়ের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মনে পড়ে আমাদেরও ছিল সোনালি সময়, লকলকে লাউয়ের ডগার মতো সবুজ এক সময়। ব্যথার সাগর পাড়ি দিয়ে বন্ধুর বাড়ি যাই, বন্ধু আমার বরফগলা শীতের দেশের সাঁই।