অক্ষবাট। আখড়া। অক্ষবাট কিংবা আখড়া মানে অনুশীলনের জায়গা। আস্তানা অর্থে আখড়া শব্দটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। আখড়া শব্দটি ব্যায়ামঘর অর্থেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আখড়া শব্দটি সন্ন্যাসীদের আশ্রম অর্থেও ব্যবহার করা হয়। তবে বাংলাদেশের মানুষ কোনো প্রকার আগার পাগার চিন্তা না করে আখড়া বলতে এক কথায় বুঝে পাগলদের মদ গাজা খাওয়ার জায়গা।
হুমায়ূন ফকির একজন লালন প্রেমিক ছিলেন। এখনো হয়তো আছেন। কারন শক্তির বিনাশ নেই। তবে শক্তির রূপান্তর রয়েছে। তাই ‘হয়তো’ শব্দটি ব্যবহার করেছি। মানুষ মরে গেলে মানুষই থাকে কিনা তা নিয়ে ব্যাপক বাহাস হতে পারে। কারন প্রজাপতি যা থেকে জন্ম হয় তার প্রতি আমার ঘৃনাবোধ রয়েছে কিন্তু প্রজাপতির প্রতি আমার আসক্তি প্রবল।
হুমায়ূন ফকির আজ পর্দার আড়ালে। তিনি যখন জীবিত ছিলেন তখন তার সাথে আমাদের প্রথম দেখা এমনই দিনে আজ থেকে সাত বছর আগে। হুমায়ূন ফকিরের আখড়ার সাথে আমাকে প্রথম পরিচয় করান সরকার আমিন ভাই। মনে আছে, হুমায়ূন ফকিরের আখড়া থেকে ঢাকা ফেরার পথে কোনো প্রকার যানবাহন না পেয়ে প্রায় দশ কিলোমিটার রাস্তা হেটে আমরা নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে আসি।
হুমায়ূন ফকির জনপ্রিয় তার দম সাধনার জন্যে। তিনি সিঙ্গা ফু দিয়ে প্রায় সাত মিনিট দম রাখতে পারতেন। এই বিষয়টি গ্রামের মানুষের কাছে বিশাল আশ্চর্যের বিষয়। আমি জানি, জাহাজের নিজস্ব কিছু ডুবুরি রয়েছে যারা জলের নিচে কোনো প্রকার সাপোর্ট ব্যতীত প্রায় পনেরো মিনিট থাকতে পারেন। বিশেষ বাহিনীর কমান্ডো ট্রেনিং-এ ত্রিশ মিনিট জলের নিচে কোনো প্রকার সাপোর্ট ব্যতীত অবস্থান করার প্রক্রিয়া অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।
যাক, হুমায়ূন ফকিরের লালনপ্রীতি ও সাধনরীতি মানুষকে কৃষ্যমান করেছে। তাইতো মৃত্যুর পরেও তিনি মানুষের হৃদয়ে। অনেকে বলতে পারেন আল্লার অলীদের কোনো মৃত্যু নাই। তিনি আল্লার অলী ছিলেন কিনা এ নিয়েও তর্ক হতে পারে। অভারঅল এই উৎসবটি হাসনাবাদ ও তার পাশ্ববর্তী অঞ্চল মানুষের মিলন মেলা।
তবে হুমায়ূন ফকিরকে জীবনে কয়েকবার দেখার সুযোগ হয়েছে। অবাক হয়েছি। কারন তার মুখ থেকে কোনোদিন কোনো শব্দ শুনতে পাইনি যেন তার প্রভু তাকে কেবল কান আর চোখ দিয়েছেন। জীবনে অনেক সাধু ফকির দেখার সুযোগ হয়েছে। কিন্তু তিনিই আমার জীবনে একমাত্র ফকির যার উচ্চারিত শব্দ কেমন আমি জানি না। আসলেই, বিপুলা এই পৃথিবীর কতটুকু জানি!