You are here

মৃদু বেদনার হাসপাতালে

‘মৃদু বেদনার হাসপাতালে’ একটি কাব্যময় হাসপাতাল। এখানে সরকার আমিন প্রেমের ঔষধের মার্কেটিং করেছেন। এখানে সরকার আমিন যতটা না কবি তার চেয়ে অধিক আত্মার বিজ্ঞানী। সরকার আমিন তার জীবন নিয়ে নীরিক্ষা করেন প্রতিনিয়ত। কবিতাইও। প্রেম, চুমু, মমতা, বৃষ্টি, মেঘ, মৃত্যু, জ্বর সরকার আমিনের একান্নবর্তী কবিতাপরিবারের প্রাত্যহিক সদস্য।

‘মুগ্ধতা বিনা নিষিদ্ধ হোক বিবাহের ঘর
মুগ্ধতা বিনা বুঝা যায় না দেহের জ্বর’

ছন্দের আড়ালে নীতিমালা প্রেরন করছেন সরকার আমিন। সমাজের জন্যে কবির উপদেশ তো থাকতেই পারে। কবি তো মাটির মানুষ, মঙ্গলগ্রহের বালু না।

সরকার আমিন বলছেন ‘সূর্যাস্তের ঘ্রাণ এসে লাগে প্রাণে’— এই যে চিত্রকল্পের নীরব ব্যবহার তা আমরা জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ব্যাপক দেখতে পাই। উপমান উপমিত সমাস জীবনের বাইরে এসে অনুভূতি জীবনপ্রবনকে চিত্রকল্প করে তুলার প্রয়াস সরকার আমিনের ভাষাবিন্যাসে প্রবল। তার কবিতা পাঠপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে সহজেই অনুধাবন করা যায় চিত্রকল্প নির্মান তার প্রিয় মানসিক অভ্যাস।

‘একটি আকুল চুমুর মমতায় খুলে যায় শরীরের সবকটা জানালা
যেন শত হলুদ পাখি একসাথে উড়াল মারার প্রস্তুতি নিচ্ছে
যেন ঘননীল আকাশ উজ্জ্বল কাতরতায় মাথা নোয়াবার চেষ্টা করছে’

কবির চুমু এখানে ঔষধের উপরে চির সত্য ঔষধ। এখানে চুমু শব্দটি যতটা না আভিধানিক তারচেয়ে অধিক কবিধানিক হয়ে ব্যবহারিক। ‘একটি আকুল চুমুর মমতায় খুলে যায় সবকটা জানালা’— কবি এখানে ভাববাচ্যের আড়ালে কর্মকে উহ্য করেছেন। ফলে পাঠকের চিন্তার বিস্তার ঘটার স্থানটি ওপেন থাকলো।

মৃদু বেদনার হাসপাতালে বইটি প্রথম প্রকাশ পেয়েছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা দুই হাজার একুশ সালে। প্রকাশক সঞ্জয় মজুমদার। প্রকাশনী মূর্ধন্য। বইটি উৎসর্গ করেছেন কবি শাহেদ কায়েসকে।

আহা তেজপাত! কবিতায় দ্বীর্ঘশ্বাস রয়েছে। এই দ্বীর্ঘশ্বাস গার্হস্থ্য দ্বীর্ঘশ্বাস নয়, এই দ্বীর্ঘশ্বাস দীর্ঘ আশ্বাসের। এখানে সময় এসে নৃত্য করে ঘুমের মতো। অন্ধকার ও সময় ‘মৃদু বেদনার হাসপাতালে’ দুপুরের রোদের মতো আসে বারবার তবে অবস্থান করে অল্প।

‘আমি লালপিঁপড়ে এক, হারিয়েছি শাখা
পারছি না বুঝতে শপথের মাথা ও মুণ্ডু’

‘মৃদু বেদনার হাসপাতালে’ ফোল স্টপের ব্যবহার নাই, কমা ও বিস্ময়সূচক চিহ্নের ব্যবহার লক্ষনীয়। মনে হচ্ছে ফোল স্টপের পরিবর্তে সরকার আমিন বিস্ময়সূচক চিহ্নের ব্যবহার করেছেন। ফোল স্টপের পরিবর্তে বিস্ময়সূচক চিহ্নের ব্যবহার হওয়া আধুনিক ব্যাপার স্যাপারে পরিনত হতেই পারে। গ্রামার কবির শাষন মানবে এমনটাই স্বাভাবিক। মৃদু বেদনার হাসপাতালের কবি নিজস্ব গ্রামারে চলতে পছন্দ করেন এমনটাই অনুমেয়। কবির নিজস্ব গ্রামারের নাম বিস্ময়। কবি বিস্ময় আর মুগ্ধ হতে ভালোবাসেন, কবি ভালোবাসেন বর্তমানের জলে নৌকা চালাতে।

‘পেছনে তাকাই না যদি পাথর হয়ে যাই
সামনে তাকাই না যদি কাতর হই’

সরকার আমিনের লেখায় যদি’র ব্যবহার তেমন পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। সরকার আমিন অতীত ও ভবিষ্যৎ নির্মানে ‘যদি’ ব্যবহার করেন। তিনি অতীত ভবিষ্যৎ সচেতনভাবে সাবেক প্রেমিকার মতো পরিহার করেন।

‘একটি মহিলা পাখির শিসে ঘুম ভাঙলো
হৃদয় ভাঙেনি
অসামান্য সুরে নেচে উঠলো হিয়া’

মহিলা শব্দের আগে ‘একটি’ শব্দটি একবার মনে হয় মেদ, আবার মনে হয় শাড়ি। শাড়ি তো মেদই তবে অলৌকিক অলঙ্কার।

সরকার আমিন কবিতার আকাশে মেঘের রচনা করেন। সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি নামে। বৃষ্টি থেকে আবহাওয়া প্রকৃতি নতুন সাজে সজ্জিত হয়ে আমাদের চোখে মনে মননে ধরা দেয় অনুপমা নিরুপমা হয়ে। তবে সরকার আমিন গাছের চেয়ে পাতাকে বড় করে তুলেন না, তুলে নাই মৃদু বেদনার হাসপাতালের অনু-পরমানুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কম্পনে কম্পনে।

‘কারো কাছে আশ্রয় কামনা করি না
আমাকে নিঃসন্দেহ মাতাল বলতে পারো, কিন্তু মদের কারনে নয়
পাগল বলতে পারো, কিন্তু উন্মাদনার জন্য নয়
এই দেখো বন থেকে কাঠ কেটে এনেছি আগুন জ্বালাব বলে’

Leave a Reply

Top