
‘তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ আলাউদ্দিন আল আজাদের প্রথম উপন্যাস। জাহেদ নায়ক চরিত্র যার মাঝে আত্মবিলুপ্তি ঘটেছে।
জহু একটি নারী চরিত্র যে আত্মহত্যা করেছিল। আত্মহত্যার কারণ বিয়ে। জহুকে পঞ্চাশ বছর বুড়োর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছিল তার অবিভাবক। বুড়োকে স্বামী হিসাবে মেনে নিতে পারে নি জহু। তখন হয়তো নিন্ম-মধ্যবিত্ত সমাজে চা খাওয়ার প্রচলন শুরু হয়নি। হলে হয়তো আত্মহত্যার পরিবর্তে এক কাপ চা খেতে পারতো জহু। আমাদের রেলমন্ত্রীর (মুজিবুল হক) বিয়ে করার প্রচার-প্রচারণাও জহুর বেঁচে থাকার কারণ হতে পারতো।
‘তেইশ নম্বর তৈল চিত্রে’র নায়িকা ছবি। তার সৌন্দর্য কবিতাসুলভ। বাঙ্গালি নারীর যে ললিত মানসিকতা তা আমরা ছবির কথা, কাজে, আচরণে প্রত্যক্ষ করি।
জাহেদ আর ছবির সম্পর্কের নির্মাণ চমৎকার। জলনীতি সম্পর্ক নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে। পরিচয় থেকে প্রেম, প্রেম থেকে গভীর আলাপন, গভীর আলাপন থেকে বিয়ে, দাম্পত্য জীবনে সুখ আর সুখ। তবে বাংলা সিনেমায় বহুল ব্যবহৃত প্রেমনীতি, বিয়েনীতি, মাঝামাঝি পর্যায়ে আহার্যের লবণের মতো বিরহনীতি এই উপন্যাসের প্রধান কাহিনিপ্রবাহে প্রত্যক্ষ।
বিশ্বাস আর সেক্রিফাইসিং মানসিকতা দাম্পত্য জীবনের প্রাণ। জাহেদ আর ছবির জীবনপাঠে বোধের জায়গায় গভীরভাবে প্রমাণিত।
সংলাপে যে জীবনাদর্শনের পরিচয় পাওয়া যায় তা নিতান্ত আটপৌরে। আটপৌরে তবে বোধের জায়গায় তুফান না তুললেও নাড়া দেয়।
জামিল চৌধুরী যার সহপাঠিনী মীরা দাশগুপ্তা। তাদের মাঝে সম্পর্ক প্রেমের, বিয়ের, অভিমানের। কলকাতার সিনেমায় আজকাল সম্পর্ক রচনায় যে প্লাটফর্ম দেখতে পাই তা তাদের দুজনের মাঝে পরিপূর্ণভাবে দৃশ্যমান।
‘পতিতালয় প্রতিভার আতুঁড়ঘর’ আমাদের মুজতবার আপ্তবাক্য। মুজতবা বাক্যটি যে বলার জন্য বলেছে এমন না, সে নিজে মনেপ্রাণে তা বিশ্বাস করে এবং চর্চা করে, বিশ্বাস আর চর্চার জায়গা থেকে তা প্রচার করে। আলাউদ্দিন আল আজাদ মুজতবাকে রহস্যময় মানুষ হিসাবে আমাদের সাথে পরিচয় করান। কিন্তু তার আচরণে এমন কোনো পরিচয় আমরা খুঁজে পাইনি। তবে তার জীবনব্যবস্থায় সমাজ কাঠামোর বাইরের জীবনাচার স্পষ্ট।
উপন্যাসটির কাহিনি শাখা-প্রশাখা প্রধান। শাখা-প্রশাখার মূল সুর জাহেদ-ছবির প্রতীয়মান প্রেম। টুলটুল তাদের প্রেমের প্রামাণিক ফসল।