You are here
Home > কবিতা >

লাল মাটির পৃথিবী

লাইব্রেরি। লাইব্রেরির পাশে মেলার মাঠ। ভাষা ভবন। ভাষা ভবনের পাশে মেলার মাঠ। মেলার মাঠের কোনায় কোনায় তাদের আড্ডা। আড্ডায় বসে তারা বিলি করে দেশবিদেশের চরিত্রের সনদ পত্র। কে ভালো কে পাপী

কে পন্ডিত মশাই কে মাস্টার মশাই

কোন দাদার সাথে কোন দিদির টক কিংবা ঝাল সম্পর্ক তা এখানে বসে জানতে পারে বিশ্ব। অথবা ইহা শান্তিনিকেতনের ভাসমান নিউজরুম। এই নিউজরুমের কোনো প্রকার পরিবর্তন হয় না। প্রতিনিধি বদলায় কিন্তু নিধিরাম আচরন বদলায় না।

অধ্যাপক বাবু দুবছর আগে যেমন করে রাস্তা মেপে মেপে হাঁটাচলা করতেন, এখনো করেন, এখন শুধু তার চোখের নিচের আকাশে ফন একখান স্বপ্নের জন্ম হয়েছে, বাবা হলে প্রত্যেক পিতার এমন একখান ভাবধাম আসে।

অর্কিড বন্ধ হয়ে গ্যাছে। অর্কিডের আচরন নিয়ে শান্তিনিকেতনে মাস্তানি করছে আড্ডা। আড্ডায় জন্মদিনে লাল নীল হলুদ কালারের প্রেম খেলাধূলা করে, ভালোবাসা এক কোনে কথা বলতে আসে, অর্কিডের দিকে তাকিয়ে বিসসাস শব্দটি ঘৃনা করতে চায় মপর্না। বামতলার লোকেরা পায়ের আওয়াজ নিয়ে আড্ডায় বসে, তাদের ওয়াজ চলে তরু ছায়া মসী মাখা দিনখানি মেঘে ঢাকা বেলা থেকে বেলা।

রাস্তার পাশে ছিল বৌদির দোকান। দাদাকে ভালোবেসে দিদি পেতেছিল সংসার। ভালোবাসার ফলও এসেছিল পৃথিবীতে। ভালোবাসা পেয়ে পেয়ে ভালোবাসালোভী হয়ে ওঠে কেউ কেউ। বৌদি আরও ভালোবাসার লোভে চলে গেল চলে গেল অন্য কারো ঘরে। তাছাড়া গাছের নিচের সংসার আর কতদিন চলে, সংসার মানে ভাত, ভাতের সাথে তরকারি, আমিষ হলে আরও ভালো।

রতনপল্লী ভালো আছে। রাতে জমে দিবারাত্রির গল্প। বিদেশী এলাকা বলে কথা। নতুন নতুন খাবার নতুন নতুন মুখ। কথাবার্তা থালাবাসনে কানায় কানায় মাপজোখ। খুব সকালে রতনপল্লী যেন রতনের মতো অসহায়— পালে বাতাস নিয়ে শিক্ষিত বাবু চলে যাচ্ছে পৃথিবীতে কে কাহার তত্ত্ববানী প্রচার করে।

পূর্বপল্লীর গেস্ট হাউজে এখন আর শিল্টু তাহে না। শিল্টুর হাসিতে তার হৃদয় দেখা যেতো। এখন সবাই যেন প্রফেশনাল হাসিতে কাস্টমার সন্তুষ্ট করতে চায়। দুইশত চব্বিশ নাম্বার রুমটা প্রায় বন্ধ থাকে। জানালায় চেয়ে চেয়ে এখন আর কেউ সাইকেল চালানো কোনো গায়ত্রীর জন্য অপেক্ষা করে না। সময় এমনি করে আলকাতরার মতো গাঢ় হয়ে আসে, বসন্ত কখনো এক হৃদয়ে আসে না, বসন্তও পাহাড় সমতল মেনে চলে।

সৃজনী শিল্প গ্রামে বদল হয়েছে বাউল। বাতাস আগের মতোই আছে। কেবল দিক পরিবর্তন করেছে খানিকটা। বসার জায়গায় আগের মতো ঘাস জমে ধুলো জমে,জলের সুব্যবস্থার খবর এখন সবাই জানে। কিন্তু এখানে রবীন্দ্রনাথ নেই। তবুও যুগল প্রেমের স্রোত এখানে আছে, ইতিহাসও ছিল একদিন। পুকুরের জলে আর হাঁস হাসে না— কিছু স্মৃতিছবি ভেসে ওঠে বারবার।

লাল মাটির শান্তিনিকেতন খুব সহজে কাছে টেনে নেয় আরামে আরামে, খুব সহজে দূরে ঠেলে দেয় বিরানে বিরানে।

পৃথিবীর সব কিছু ঘুরছে, লাল মাটিও একদিন ঘুরে যাবে বলহীন আবেগে। পৃথিবী ঘুরছে, লাল মাটি মিলিত হবে চকলেট মাটির সাথে। সাঁওতাল যারা জেনে যাবে তারা তারাও মানুষ…

Leave a Reply

Top