You are here

বৈষম্যের স্রোতে সমতার স্লোগান

বস্তু মাত্রই অসংখ্য অণু বা কণার সমষ্টি। প্রতিটি কণা স্বতন্ত্র ওজন নিয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে আকর্ষিত হচ্ছে। ভূ-কেন্দ্র হতে প্রত্যেক কণার দূরত্ব অধিক হলে পাশাপাশি অবস্থিত কণাগুলোর ওপর পৃথিবীর আকর্ষণ বল পরস্পর সমান্তরাল ও সমমুখী। বস্তুটিকে যেভাবেই রাখা হোকনা কেন এ সমস্ত সমান্তরাল বলগুলোর লদ্ধিবল একটি বিন্দুতে ক্রিয়াশীল থাকে। এই বিন্দুই হলো বস্তুর অভিকর্ষ কেন্দ্র বা ভার কেন্দ্র।

ভার কেন্দ্রের আচরণ, গতিবিধি বস্তুর অন্য কেন্দ্র থেকে আলাদা। সেন্ট্রাল অব গ্রেভেটির কারনে বস্তুর মধ্য থেকে কিছু অংশ আলাদা হয়ে যায়। সুতরাং ল অব নেচারের কারনে বৃহত্তর পরিসীমায় বৈষম্যে থাকবে তাইতো স্বাভাবিক।

শীতকালে সূর্য পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থান করে। পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে যায়। সূর্যের অবস্থানের কারনে পৃথিবীর কোথাও তাপমাত্রা হিমাংকের নিচে নেমে আসে। অল্প তাপমাত্রায় আর অধিক তাপমাত্রায় উৎপাদিত ফসল কখনো এক নয়। তাইতো তাপমাত্রার উপর ভিত্তি করে একেক অঞ্চলে একেক ফসল উৎপাদিত হয়। যা খেয়ে আমরা বেঁচে থাকি, যার উপযোগীতা আমাদের রুচিবোধের জায়গা তৈরি করে তাইতো ফসল। ফলত মানুষের রুচিবোধ, জীবনাচার ভিন্ন থেকে ভিন্নতর স্বাভাবিকভাবেই হয়ে যায়।

আবার ধর্মীয় কারনে অনেক প্রাকৃতিক খাবার নিষিদ্ধ। তাই খাদ্যগত্য বৈষম্য দূর করা যাচ্ছে না। যাচ্ছে না এই কারনে যে প্রত্যেক মানুষ সামাজিক সুবিধাকে সামনে রেখে পরিমিত ধর্মবোধ পছন্দ করে।

পাহাড়ে বসবাসরত মানুষের সংগ্রাম আর সমতলে বসবাসরত মানুষের সংগ্রাম এক নয়। এক নয় নদী বা সাগর উপকূলের মানুষের সংগ্রামইতিহাস এবং মরুভূমির মানুষের সংগ্রামইতিহাস। সংগ্রাম মানসিক গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ভৌগলিক এই বৈষম্য মানুষের মাঝে প্রথমে শারীরিক, পরে মানসিক বৈষম্য তৈরি করে।

বৈষম্য দ্বন্দ্বকে গাঢ় থেকে প্রগাঢ় করে। মনে করা হয় দ্বন্দ্ব বিকশিত হওয়ার মূল হাতিয়ার। তাই বিকশিত মানসিক অবস্থা একপ্রকারের পতন, মানসিক বিকার এক প্রকারের অর্জন। 

এমনিভাবে বৈষম্যের স্রোতে সমতার স্লোগান ফেনায়িত ঢেউ মাত্র। যে ঢেউ কোনোদিন কূলে পৌঁছে না, কূলে পৌঁছানোর তাড়া বৈষম্যের শরীরকে হৃষ্টপুষ্ট করে।

তবে বৈষম্য যদি ভাইরাস হয়, ত্যাগের মহিমা সেখানে এন্টিভাইরাস। ত্যাগের মহিমায় পাথরও প্রকৃতির মতো মোলায়েম হয়ে যায়, জলের শরীরও হয়ে যায় পিচঢালা রাস্তা। তাইতো মানবিক পৃথিবী মূলত ত্যাগের মহিমায় সজ্জিত পৃথিবী যেখানে মানুষ নাতিশীতোষ্ণ মানসিকতায় সময়যাপন করে।

Leave a Reply

Top