শ্যামবাঢী। শান্তিনিকেতন। রুম ভাড়া নিয়ে থাকি। সকালে বৌদির দোকানে যাই, চুপ করে লুচি- ঘুগনি তারপর দুই কাপ চা খেয়ে সোজা রুমে চলে আসি। গাছের নিচে টিনের চাল, চালের নিচে একমাত্র আমি। দুপুরে রুমে রান্না করি-- ভাত, আলু অথবা ডিম। কোনোদিন আলু-ডিম একসাথে। ঢেড়সভাজি মাঝে মাঝে তরকারির তালিকায় অভিজাত হিশেবে জায়গা করে নেয়। খুব বেশি অলস হয়ে উঠলে রান্না করা গরম ভাতের সাথে আগুনছ্যাঁকা শুটকীই যথেষ্ট। দুপুরে জয়দেব দার কাছ থেকে কয়েক গ্লাস আখের রস খাওয়ার জন্য বের হই। দুপুরেই সূর্যের সাথে আমার দেখা হয়, কেবল দুপুরেই। কতটুকু সূক্ষ্ম হলে নিজেকে দেখা যায় জানি না তবে জানার ব্যাকুল তিয়াস নিয়ে নিমজ্জিত থাকি সময়ের বিন্দু বিন্দু রেখায়। পৃথিবীতে যখন অন্ধকার নামতে শুরু করে, সব পাখি যখন নীড়ে ফিরে, সবাই যখন অন্ধকারকে ঘরে ফেরার আযান মনে
Day: May 13, 2020
হাওড়ামুখী
বোলপুর থেকে হাওড়ামুখী আমরা। সবার মনেই কেমন একটা ফুরফুরে ভাব। কোনো এক বাউলমুখী মানুষ ওঠলেন আমাদের কামড়ায়। কে ছেড়ে গেলে নাকি কাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না এমন জাতীয় গান ধরলেন। আমাদের স্যার আর সিটে বসে থাকতে পারলেন না। ধরলেন গান, করলেন ভিডিও। এক উৎসবমুখর চেহারা নেমে আসে ট্রেনের কামড়ায়। বাউল নেমে গেলে থেমে যায় কলরব। তনুশ্রী গান ধরে। ওর আবার ক্লাসিক্যাল গলা। এমন গলা সন্ধ্যা অথবা বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি আড্ডায় বেশ আরামদায়ক। ট্রেনের আওয়াজে দরকার এমন গান যা ঝড়জল ঝকঝক আওয়াজের লগে বন্ধুত্ব করে। তাই ধরলাম গান। হামিং সাপোর্ট বেশ পেলাম। আমি আর আমি থাকলাম না। কোথায় যেন হারিয়ে গেলাম। চারপাশে মানুষ জমে গেল। ইহা এক অন্যরকম অনুভূতি। গান শেষ। বায়তুল্লাহ কাদেরী স্যারের হাত মানিব্যাগে চলে গেল। চকচকে নরম একখান
অভাবে নয়, স্বভাবে
তাকে রক্ষা করবে তার আল্লা। বিষয়টা খুব মজার। কিন্তু সে জানে না আল্লা রক্ষা করা ধবংস করার দায়িত্বে নাই। দুনিয়া এক সিস্টেমের নাম। সিস্টেমে আছো তো এমনিতেই সব রক্ষা পাবে। আমি তাকে ভয় দেখাতে চাই নি। সে ভয় পেয়েছে। তার ভয় পাওয়ার কারনও সিস্টেম। চাচা, এই রুমটাকে কী নামে ডাকে? সে ইশারা দিল লেখাটির দিকে। একটি লেখা যেখানে বুলেট করে লেখা Guard। আপনিই এই ট্রেন চালান? হুম। কীভাবে? এই প্রশিক্ষন নিয়েই আমি এখানে বসেছি। সরকার তো আর এমনিতেই আমাকে পচাঁত্তুর হাজার টাকা মাস শেষে দিয়ে দেয় না। আমিও বললাম 'হুম'। তারপর সে ওযু করতে গেল। সালাত কায়েম করবে। খুব আস্তে আস্তে সালাত কায়েম করতে থাকে সে। সালাত শেষ। এখন প্রভুর কাছে হাত তুলে সে। এই হাত তুলল, এই হাত নামাল। খুব অল্প সময়ের ব্যাপার। ভৈরব স্টেশন থেকে আমি দাঁড়িয়ে আছি।
বসার ঘরের আলো নীরবে বাইরে যায়
দুপুরের ভেতর দিয়ে চলে যায় আন্তনগর ট্রেন-- চাঁদনী রাত। নদী পড়েছে অফিসিয়াল পোশাক, আমাদের পুরাতন মাঝি সেই আগের লেবাসেই আছে, মাইকে মাইকে বাজতে থাকে হামদ কিংবা নাত। ভিক্ষুক এখনো দরজায় পাতে হাত। দরজার নিজস্ব কোনো শব্দ নেই, হাজার বছরের জানালা আমার চোখের সমান। জমানো কথার ভেতর ফ্রিল্যান্স দৃশ্য আসে বারংবার, পানপাতার মতো মুখ কেন হারায় নিজের ভিটা তা তো জানবার কথা, তা তো জানবার কথা। চোখে আসে সীমানা মনে থাকে হিসাব একটি নীল রঙের সকাল থেকে জন্ম নেয় সবুজ রঙের বিকাল। চোখের ভেতর দিয়ে চোখ দেখতে গেলেই যতসব আলোর মেলা থোকা থোকা আলো বিন্দু বিন্দু আলো চুপচাপ চুপচাপ এক দুনিয়া কামনার ঘরে মপর্না হিসাবের চারা রোপন করে ধীরে ধীরে সেই আন্তনগর ট্রেন দুপুরের মতো চলে যায় রাতের ঘরে
জলের নিচের মাছ আমিও হতে পারতাম
তখন আমি ছাত্র। তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র। আমার ক্রমিক নং চার। তিন ছিল আমারই মতো আরেকজন মানুষের। সেই মানুষটাকে আজও আমি ভুলতে পারিনা। পারিনা বললে ভুল হবে। ভুলতে চেষ্টা করিনা। আমাদের গ্রামের পাশেই মেঘনা নদী। মেঘনা নদীর পাশে একটি বিদেশি এলাকা। বিদেশী এলাকাটিকে আমরা হাউজিং বলি। সেখানে যতসব ভদ্রলোকদের জায়গা। সেখানে সেই মানুষটি যার ক্রমিক নং তিন সে থাকে। বিকেল বেলা বাজার চারতলার মাঠ থেকে হাউজিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকি, কখনো খেয়া নৌকায় চলে যাই নদীর ঐপাড়ে যদি তাকে দেখা যায়। হাউজিং এলাকাটি দেয়াল দিয়ে বেষ্টিত, আমার মতো সাধারন মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ, তথাপি দেয়ালের উপর দিয়ে ছাঁদে তাকিয়ে থাকতাম যদি তার দেখা পাই। তাকে কখনো দেখা যেতো না, তার মতো করে অনেকের দেখা পাই। মতো করে পাওয়া মানুষ দিয়ে কী আর জীবন চলে!
নিরাকার জলে জালের মাছ
আমি মানে নিরাকার। যত গভীরে যাই ততই ছোট হয়ে আসে আমার চোখ কান নাক গলা মুখ। মুখের গল্প যেন সময়ের ফেনা-- সময়ের ঢেউয়ের তালে ফেনাদের জীবন। একদিন একদিন করে মানুষ মরে যায় মানুষ মরে যেতে যেতে আশার বীজ রেখে যায় । আশার বীজ থেমে গেলে হৃদয়ের ঘাটে পানাফুল ফুটে-- থেমে যাওয়ার নাম গতি, পরাজিত জীবন জয়ের বাতাস। নিরাকার আমির নাম নেই কোনো, কত নামে ডাকে লোকে আমাকে তোমাকে, আমাকে দেখা যায় না তবুও দীর্ঘজীবী কার্বন কপি আসে সময়ের ফ্লেপে। বাস্তব এমনই যা দেখে না তাকে দৃশ্য বলে যা শুনে না তাকে কথা বলে যা বুঝে না তাকে বোধ বলে এক চমৎকার অদৃশ্যের ভেতর কেটে যায় রাধাফুল জীবন, হরতাল, হাতিয়ার-- আমার ঘরে আমিই নিরাকার।
ভুল ঠিকানায় চিঠি দিলাম উত্তরের আশায়
ভুলে যেও আমাকে ভুলে যেও জলে স্থলে আকাশে বাতাসে ভুলে যেও ভুলে যেও আমাকে শব্দ হয়ে জীবিত থাকো মুখ থেকে মুখে বৈশাখ থেকে চৈত্রে জীবিত থাকো মাসের পর মাস জীবিত থাকো ব্রা প্যান্টি আন্ডারওয়্যারের মতো শতভাগ প্রায়োগিক দূরে ভাসতে ভাসতে অচেনা দ্বীপ আমি অচেনা গ্রহ কোনো পৃথিবীর দামি বিজ্ঞানীর কালকেতু ফুল্লরা তোমাদের ইতিহাস চকেট সংকট আমাদের কালের রাজহাস চকলেটলোভা গরীব অসহায় শিশুর মতো আমাকে ডাকবে না আর ভুলে যেও বারান্দায় ঝুলে থাকা শুকনো কাপড়ের মতো বাতাস আর সূর্যকে ভুলে যেও ঘুম আমার চোখেও নামে রাত আমার দেহেও বহে বসন্তগান আমিও গাইতে চাই আমিও চিনি উত্তর চিনি দক্ষিনের হাওয়া বর্ষার নবোপলীয় জল আমিও রক্ত মাংসের মানুষ একা ভুলে যেও সমস্ত কিছু নিয়ে একটা আকাশ একটা দুঃখ একটা সাইকেল রিংকেল একটা সকাল বেলার রজনীগন্ধা একটা সৃজনী শিল্পগ্রাম একটা প্রান্তিক রেলওয়ে স্টেশন একটা হুগলী নদী নীরব সুনসান ভুলে যেও ঝগড়াসমগ্র ভুলে গেলেই বেচে যাবে তুমি বেহুলা ভাসান আমাদের নদী
আকাশ দিলে চলবে মেঘ আমি চাষ করে নিবো
চরমে যাবার ভয় বারবার জড়ায়ে ধরে পরমকে পাওয়ার আকুতি বারবার হৃদয়ে আসে গুনাগারের মতো ভগবান আমার বারবার ডাকে আমি যেতে চাই আমি ধরতে চাই ঘুমাতে চাই যোনির ভেতর গতিশীল নদী হয়ে ঘাসফুল অজ্ঞান না হয়ে মরে যায়, আকাশ থেকে নেমে আসে নৌকাবাইচ-- লাল পতাকা-- নাগরিক শব্দ থেকে নিস্তার নেই-- বাড়িদের কোনো ঘর নেই-- এতো নাইএর মাঝে ক্যামনে মাঝি নৌকা চালায় ইচ্ছে জাগে জানিবার-- বৃষ্টির মতো মোনালিসা মেঘ আসে-- সৃষ্টির জল চলে যায় পাহাড়ে-- চলে যায় পর্বতের পরপারে। কেন তুমি হাসতে জানো না? কেন তুমি প্রার্থনার মতো চুপ থাকো ইথারে ইথারে? কেন তুমি পুষে রাখো কাফের অভিমান? আমি তো রোজ মানুষ, মিনিটে মিনিটে মানুষ, কিয়ামতের পরেও মানুষ-- আমার জন্য একপাশে দোযখ অন্যপাশে স্বর্গ-- অনিয়মিত হাসি আমাকেও দিতে হয়-- স্বর্গের লোভে আমিও কায়েম করি সালাত-- আমার হৃদয়েও আসে কামাতুর এলহাম। কেন তুমি মেলে ধরনা
গার্হস্থ্য নয়, কসমিক
মানুষের মতো দেখতে উদ্ভুত কালো রঙের আকাশটা কোথায় যেন হারিয়ে যায়, বারবার তাকে ধরার চেষ্টা করি, বারবার শেয়াল ডাকে পাশের ঝোপঝাড়ে। রেললাইন পথ তারপর রেললাইন আবার পথ আবার সেই চেনা চেনা আকাশ। আকাশের মুখ থেকে ভেসে আসে জিব্রাইলের ডানা, মৃত্যুর মতো নিয়ে যেতে চায় আমাকে,আমি ভয় পাই, ভয় পেয়ে জেগে উঠি, আমি ভয় পাই, আমি ভয় পাই না। জানালা খোলা মাঠ জানালা তারপর খোলা নির্জন মাঠ তারপর আমার চোখ আটকে যায় মেঠোপথে। আমার চোখ আটকে যায় আমাদের অনেক দিনের চেনা কোনো এক বারান্দায়। মানুষ বসে থাকে পাখি উড়ে চলে গাছপালা কেবল চুপ করে দেখে যায় অনেক মানুষের কথাগল্প গল্পদৃশ্য। পৃথিবীর চুল আরেক পৃথিবীর বাতাসে কাঁপতে থাকে,আমি তাদের কম্পন হাত দিয়ে হৃদয় দিয়ে ধরার চেষ্টা করি, তারা ধরা দেয় না, পলাতক প্রেমিকার মতো ইশারায় কথা বলে, ইশারায় বন্যা আনে, বর্ষা গৃহপালিত হয়ে যায় গরীবের ঘরে। মানুষ কেমন
জানালার পাশে দরজার বাড়ি
জানালা দরজা নয় দরজার ছোট বোন জানালাটা আমার খুব চেনা একদম মনের কাছের কোনো কথা আজকাল কথাগুলো ব্যথা হয়ে যায় ব্যথার আলিফ- লায়লায় যদি সিন্দবাদ হতে পারতাম উত্তরাধিকার সম্মানে পেতাম জাদুর তরবারি আমাকে কেটে ভাসিয়ে দিতাম নীল দরিয়ায় জল থেকে বাষ্প, বাষ্প থেকে বৃক্ষ এইভাবেই একদিন জানালা হতাম জানালা দরজা নয় দরজার মতো দেখায় কেবল